প্রশ্নঃ জুমু’আর দিনে মুবারাকবাদ জানানোর ওপর হুকুম কী? কারন আমাদের দেশে জুমু’আকে উপলক্ষ করে জুমু’আর দিনে একে অন্যকে “জুমু’আ মুবারাক” বলে অভিনন্দন জানানো একটা প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উত্তরঃ সমস্ত প্রশংসাই সেই মহান রবের উদ্দেশ্যে।
প্রথমতঃ
এটি সন্দেহাতীত যে মুসলিমদের জন্য জুমু’আ বার একটি “ঈদ” অথবা “উৎসব”, যেমনটি বর্ণিত হয়েছে হাদিসেঃ
ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “এই (জুমু’আর) দিন হচ্ছে একটি ঈদের দিন যা আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন মুসলিমদের জন্য। কাজেই যে ব্যক্তি জুমু’আকে পেল, সে যেন গোসল করে নেয়। আর তার কাছে যদি কোন সুগন্ধি থাকে, সে যেন তবে তা ব্যবহার করে। আর তোমরা অবশ্যই (এই দিনে) মিসওয়াক করে যাবে।”
[ইবন মাজাহ, ১০৯৮; আল-আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
ইবন আল কাইয়্যিম (রহঃ) জুমু’আ বারের ফযিলাত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ
তেরঃ এটি হছে একটি ঈদের দিন যেটি প্রতি সপ্তাহে আবর্তিত হয়।
[যাদ-আল-মা’আদ, ১/৩৬৯]
কাজেই, মুসলিমদের জন্য ঈদ তিনটি; ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আযহা, যে দুটো একবছরে একবার করেই আসে, এবং তৃতীয়টি; জুমু’আ, যেটি প্রতি সপ্তাহেই আসে।
দ্বিতীয়তঃ
ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে মুসলিমদের মধ্যকার অভিনন্দনবাদ জানানোর ব্যাপারে যদি বলতে হয়, হ্যাঁ-এমনটির অনুমতি আছে; যা আমরা সাহাবাদের (রাঃ) বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানতে পারি।
জুমু’আ বারকে উপলক্ষ করে একে অন্যকে মুবারকবাদ জানানোর ব্যাপারটির ওপর বলতে গেলে যে বিষয়টিকে আমদের প্রাধান্য দিতে হয় তা হল, এমন মুবারকবাদ জানানোর ব্যাপারটির ওপর কোন অনুমোদন নেই। কারন জুমু’আ বার যে একটি ঈদ, এই কথাটি সাহাবাগণ আমাদের চেয়ে বেশ ভাল করেই জানতেন, এই দিনের ফযিলাত সম্পর্কে অবশ্যই তাঁরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান রাখতেন এবং এই দিনের যথার্থ মর্যাদা দিতে তাঁরা ছিলেন বেশ বদ্ধপরিকর। তথাপি, এমন কোন বর্ণনা অথবা ঘটনা পাওয়া যায়না যেটি নির্দেশ করে যে জুমু’আ বারকে উপলক্ষ করে সাহাবারা (রাঃ) একে অন্যকে মুবারকবাদ জানাতেন। নিশ্চয়ই, তাঁরা ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সবচেয়ে খাঁটি অনুসারিগণ, তাঁদেরকে অনুসরণ করার মাঝেই নিহিত আমাদের প্রভূত কল্যাণ।
শাইখ সালিহ ইবন ফাওযান (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “জুমু’আ বারে জুমু’আ মুবারাক বলে অভিবাদন জানিয়ে টেক্সট মেসেজ পাঠানোর ওপর হুকুম কী?”
উত্তরে তিনি বলেনঃ
“ইসলামের পূর্ববর্তী সৎ ও একনিষ্ঠ অনুসারীগণ জুমু’আ বারকে উপলক্ষ করে একে অন্যকে মুবারকবাদ জানাতেন না। কাজেই আমাদের উচিত নয় এমন কোন আক্বিদা বা আমলের সাথে পরিচিত হওয়া যা তাঁদের মাঝে ছিলনা”।
[আজওয়াবাত আস’ইলাহ মাজাল্লাত আল-দাওাহ আল-ইসলামিয়্যাহ]
ঠিক এমনই একটি ফতওয়া দিয়েছেন শাইখ সুলাইমান আল-মাজিদ (রহঃ)। তিনি বলেনঃ
জুমু’আ বারকে উপলক্ষ করে “জুমু’আ মুবারাক” বা এ জাতীয় কিছু বলার মাধ্যমে একে অন্যকে মুবারকবাদ জানানোর কোন অনুমতি নেই। কারন, এটি দু’আ এবং যিকর এর আওতায় পরে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই এটিকে কুরআন এবং সুন্নাহর কোন দলিলের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। আর যেহেতু দু’আ এবং যিকর সম্পূর্ণভাবে ইবাদতের সাথে সম্পর্কযুক্ত, এই ধরনের কোন দু’আ এবং যিকর এর মাঝে যদি আদৌ সামান্য পরিমান কল্যাণ থেকে থাকত তবে আমাদের বহু পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবাগণ (রাঃ) তা করতেন। একথা যদি কেউ বলে থাকে যে জুমু’আ বারকে উপলক্ষ করে একে অন্যকে মুবারকবাদ জানানোতে কোন সমস্যা নেই, তিনি প্রকৃত অর্থে একথা বলছেন যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাহ সহ অন্যান্য ইবাদতের পর এমন দু’আ আর অভিবাদনের জন্য অনুমতি থাকা সত্ত্বেও পূর্ববর্তী সৎ ও একনিষ্ঠ অনুসারীগণ সেই সময়গুলোতে তা করেননি।
তবে, যদি কোন মুসলিম জুমু’আর দিনে তার কোন ভাইয়ের কল্যাণ কামনা করে আল্লাহ্র কাছে দু’আ করে, এর মাঝে তবে কোন সমস্যা নেই।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহান ওয়া তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
[মূল ফতওয়া থেকে ভাষান্তর। মূল ফতওয়াটির লিংকঃ http://www.islamqa.com/en/ref/134741]
No comments:
Post a Comment