Thursday, August 20, 2015

শির্ক কতটা সূক্ষ্ম হতে পারে?

শির্কের ক্যামোফ্লাজ কতটা সূক্ষ্ম হতে পারে সেই ব্যাপারটা নিয়ে একটা হাদীস শেয়ার করছিঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এ উম্মতের শির্ক রাতের আঁধারে কালো পাথরের উপর কালো পিঁপড়ার পদচারণার চেয়েও সূক্ষ্ম বা গুপ্ত।”
(সহীহুল জামে আসসগীর ৩/২৩৩)

উলামায়ে কিরাম এই জাতীয় সূক্ষ্ম শির্ক বলতে ‘শির্কে আসগার’ বা ছোট শির্কগুলোকে বুঝিয়েছেন।
.
ছোট শির্ক কী কী?
ক) ‘রিয়া’ বা লোক দেখানো আমাল। শারীয়াতের এমন যে কোন আমাল যা একমাত্র আল্লাহর জন্য করার কথা ছিল অথচ তা মানুষকে দেখানোর জন্য করা হচ্ছে মানুষ তাকে ভালো হিসেবে জানবে – এটাই রিয়া।
খ) আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা।
গ) “আল্লাহ এবং আপনি যা চান” এ জাতীয় কথা বলা। বরং বলতে হবে “আল্লাহ যা চান তারপর আপনি যা চান” অথবা শুধু “আল্লাহ যা চান”। ‘এবং’ ‘ও’ ইত্যাদি শব্দ জোড়া দিয়ে দ্বিতীয় কারও চাহাতকে প্রাধান্য দেয়া যাবেনা।
ঘ) “যদি আল্লাহ এবং আপনি না থাকতেন তবে আমার অনেক বিপদ হত” – এ জাতীয় কথা বলা।
.
তবে অনেক উলামায়ে কিরামের উল্লেখিত হাদীসটা রিয়া বা লোক দেখানো আমালের মধ্যে বিশেষ করে সীমাবদ্ধ করেছেন।
.
প্রসঙ্গতঃ ছোট শির্ক বা শির্কে আসগার মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়না তবে সেই শির্কযুক্ত আমালকে বিনষ্ট করে দেয়।
[তথ্যসূত্রঃ (১) সুন্নাতের প্রসারিত ঝান্ডাঃ আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত দলের আকীদা; (২) প্রত্যেক মুসলিমের যে সব বিষয় জানা ওয়াজিব]
-------- --------
এবার আমার নিজের কিছু কথা বলি,
অনেক ভাইকে দেখি এ জাতীয় কথা ফেইসবুকে লিখতেঃ
“আজ কুরআনের অমুক অমুক আয়াত তিয়ালাওয়াত করার সময় চোখ ফেটে পানি বের হয়ে গেল।”
এমন কথাটা কি শেয়ার করা অনেক দরকার ছিল ভাই?
.
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত আদায় করতে মানুষ যেখানে হিমশিম খায় সেখানে আল্লাহ সুবহান ওয়া তাআলা আপনাকে কুরআন তিলাওয়াত করার ক্ষমতা দিয়েছেন আর আপনি তিলাওয়াত করছেন, নিঃসন্দেহে মানুষ আপনাকে অনেক ভালো নজরে দেখবে। আপনি সেটা পোস্ট করার আগে বেশ ভালো করেই জানতেন।
.
আমার কথায় আঘাত পেলে বা মর্মাহত হলে আমি দুঃখিত। তবে আমি চাই না হাশরের ময়দানে আমার কোন ভাই বা বোন নিজের বিনষ্ট আমাল দেখে হায়-হতাশ করুক। জুম’আ বারে সবাইকে সুরা কাহফ পড়ার কথা বলতে চাইলে Imperative বাক্য ব্যবহার করলেই চলে – আজ সবাই সুরা কাহফ পড়ে নিন। এ জন্য Assertive বাক্য বা “আমি আজ সুরা কাহফ পড়ছি” বলার কোন দরকার নেই।
.
মনে রাখবেন, আমাল করার জন্য নিয়তের সাথে কায়িক পরিশ্রম করা লাগলেও সেই আমাল বিনষ্ট করার জন্য শুধু নিয়তই যথেষ্ট। এটাই সালাফি উলামাদের মত।
.
ছোট বেলায় জুম’আর বয়ানে খতিব সাহেবের মুখ থেকে শুনেছিলাম, এক ব্যক্তি তার মুখের কথা দিয়ে দুই হাজ্জ্বের সাওয়াব নষ্ট করে ফেলেছেন। খুব বেশি কিছু তিনি বলেন নি। মেহমান এলে বিদায় দেয়ার সময় তিনি তার স্ত্রীকে বলেছিলেন, “আমার দ্বিতীয় হাজ্জ্ব থেকে নিয়ে আসা যমযমের পানি নিয়ে এই ভাইকে দাও।”
.
আল্লাহ সুবহান ওয়া তাআলা আমাদের সবাইকে যাবতীয় শির্ক থেকে হেফাযত করুক। আমীন।

No comments:

Post a Comment