Sunday, June 26, 2011

সাদা কাগজের লেখক হতে চাই



১.
আবারো ফেইসবুকে বসলাম আচ্ছা মানুষ কিভাবে ফেইসবুকে বসে? নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম নিজেই জবাব দিলাম, আমি জানি না


.
আমি একটা চেয়ার কিনেছি তার নাম দিয়েছি ফেইসবুক আমি সেটাতে বসি নিয়মিত বসি আমি সব কাজ নিয়মিত করি আমাকে ফেইসবুকে বসতে হয় নাহলে রাত আর সকালের খাবার খেতে পারিনা আমি চব্বিশ ঘন্টায় দুবার খাই, রাত আর সকালে আমি আগে রাতের খাবার খাই, তারপর সকালে খাই আমি দুপুর আর সন্ধ্যায় খাইনা। তখন সময় পাইনা আমি তখন ধৈর্যশীল হবার প্রশিক্ষন নেই প্রথমে কমপ্লিট স্যুট আর শ্যু পরি। গায়ে লেপ জড়িয়ে নেই। তারপর ফ্যান বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকি গরমে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য ধৈর্যের প্রশিক্ষণ নেই। আরও একটা কারণ আছে। আমার বাবা বলেন, "My son, if you really want to be patient, try to become a patient at first, as soon as you can." ধৈর্যশীল যদি হতে চাও রোগী হও তবে কথাটা খুব ভাল লেগেছিল। রোগী আর ধৈর্যশীল ব্যাক্তির মধ্যকার মিল আমি জানতাম। আমি তাঁর সে কথাটা মানার চেষ্টাই করি প্রথম স্তরে উঠতে পেরেছি সেদিন জ্বর এসেছিল ঠান্ডা লেগেছিল খুব ভাল লেগেছিল তাতে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, খুব দ্রুতই আমি ধৈর্যশীলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠতে যাচ্ছি খুব দ্রুতই


.
মা আমার জন্য একটা তাবিজ এনেছিলেন বাসার কাজের বুয়া এনে দিয়েছিল বুয়াটার নাম সখিনার মা সে  প্রতিদিন দুপুরে ঘর মুছতে আসে। আমি তখন স্যুট পরে গায়ে লেপ জড়িয়ে বসে থাকি।  আমাদের বাড়িতে তিনটে ঘর। আমি তৃতীয় ঘরে থাকি। সখিনার মা সব ঘর মোছার পর আমার ঘরে আসে। আমি তাকে আগেই বলে দিয়েছি। ঘর মোছার সময় সে আমার দিকে তাকিয়ে  হাসে। দাঁত ভেঙচিয়ে হাসে ভয়ঙ্কর হাসি। জিপসী বুড়িদের মত লাগে তাকে তখন আমার ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু ভয় পাই না আমি তখন একটা সুপার গ্লু এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। আমি সাধারণত এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনা। শুধু তখনই করি। আমাকে  তাবিজ পরিয়ে দেবার  জন্য মাকে ইন্ধন যুগিয়েছিল সে। আমার গলায় তাবিজ লটকাবার  জন্য মা আর সখিনার মা যুদ্ধ করেছিলেন সে যুদ্ধে আমি মার্টার হয়েছিলাম মা আর সখিনার মা  জিতে যায় আমি তাবিজ পরেছিলাম একপাশের মোমের প্রলেপ ছিল তাতে বেশ ভাল করে পড়েছিলাম খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কাগজটা একদম বের করে পড়েছিলাম সাদা কাগজ ছিল তারপরও পড়তে পেরেছিলাম



.
আমি সাদা কাগজ পড়তে পারি সবাই পারে না। পড়ার মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দের এটি আমার পরম শ্রদ্ধেয়ভাজন এক শিক্ষক বলেছিলেন, "রিকশাওয়ালা আক্কাস মিয়া আর তুমি দুজনেই লেখা পড়তে পার তবে তোমার মধ্যে স্বকীয়তা কোথায়? তুমি তারেক  হাসান তবে এক্সট্রা অর্ডিনারী হচ্ছো কোন দিক দিয়ে? তুমি কি সাদা কাগজ পড়তে পার? জানা আছে বিদ্যেটা?"
সেদিনই প্রথম  আমি সাদা কাগজ পড়বার ইচ্ছে বোধ করলাম। শিখেও ফেললাম কিভাবে পড়তে হয় সাদা কাগজ পড়বার সব বিদ্যে স্যার শিখিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর সব বিদ্যে আমার মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ব্লুটুথের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন ব্লুটুথের মাধ্যমে ডাটা পাঠালেও আসল ডাটা থেকে যায় ক্ষয় হয়না, শেষ হয়ে যায়না। স্যারের বিদ্যেও শেষ হয়নি।



.
মাহমুদ স্যার বাংলা পরীক্ষার খাতা দেখতেন কলেজের নয়, কোচিংয়ের পরীক্ষার খাতা সদা হাস্যজ্জল মানুষ ছিলেন। তার ভ্রু খুব পাতলা ছিল। তার ভ্রু কি তখন পরছিল না গজাচ্ছিল, তা দেখে বুঝতে পারতাম না ভাবছি স্যারকে ফোন দিয়ে একদিন জিজ্ঞেস করবো। আমার খাতা দেখে তিঁনি খুব গম্ভীর হয়ে যেতেন। মুখে হাসিটা লেগে থাকত তারপরও তখন তাকে মোনালিসার মত লাগত দেখতে।  অবশ্য পুরুষ মোনালিসা। আমার মত কোন এক ছাত্রের খাতা দেখতে গিয়ে বিষণ্ণ হাসি দিয়েছিলেন  হয়ত মোনালিসা আচ্ছা মোনালিসা কি কারও শিক্ষিকা ছিলেন? এমন কি হতে পারে ভিঞ্চিই ছিলেন সেই ছাত্র? হলে হোক, তাতে  আমার কী। এতে মোনালিসার ভ্রু আর গজিয়ে উঠবে না মাহমুদ স্যার একদিন আমার খাতা দেখা শেষে বলেছিলেন, "তারেক, তোমার ভবিষ্যত্‍ খুব উজ্জ্বল তবে সেটা কোন শিক্ষা প্রতিষ্টানে নয়, তোমার বিবাহিত জীবনে তুমি তোমার স্ত্রীর বিরক্তির কারন হবে না কখনও আমি তোমার খাতা দেখেই বুঝতে পেরেছি যা বোঝার একটা ছাত্রের খাতা দেখেই তার সাইকোলজি বুঝতে পারি আমি। তোমাকে ঈর্ষা বোধ করছি রীতিমত কাশ, তোমার মত হতে পারতাম! তবে অপরচুনিটি পেলে কিন্তু ছাড়তাম না।  জানই তো, মায়ের পায়ের নিচে তোমার জান্নাত, আর স্ত্রীর পায়ের নিচে তোমার সংসারের জান্নাত জানো না? " আমি স্যারের কথাগুলো অন্তর থেকে উপলব্ধি করতে পারছিলাম মাথা ঝাকিয়ে বললাম "জ্বি স্যার, দুয়া করবেন আপনার দুয়াই তো আমাকে আজ এই স্তরে উঠতে সাহায্য করেছে।"



.
সাদা কাগজ পড়বার তুলনায় লেখা খুব কঠিন। সাদা কাগজের পাঠক মাত্রই লেখক হতে পারেন না আমি সাদা কাগজের লেখক হতে চাই বেশ বড় লেখক গেল সেমিস্টারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তখন থেকেই লেখক হবার চেষ্টা করছি ফাইনাল পরীক্ষার খাতায় প্র্যাকটিস করেছি। অনেক বেশি করেছি। ফাইনাল পরীক্ষা থেকেই  আনুষ্ঠানিকতার শুরু। এর পিছনে কারণ ছিল। আমি স্যারদের প্রিয়মুখ হতে চাই আমি তাঁদের কষ্ট চাইনা তাঁরা কষ্ট করে শ্রম দিয়ে আমার খাতা দেখুক, আমি সেটা চাইনি তারা আমাকে মনে রাখুক । আমিও তাদের মনে থাকতে চাই। আমি তার প্রমান দিতে চেয়েছি গেল সেমিস্টারের রেসাল্টের অপেক্ষা করছি






 --------------------------------------
লেখক পরিচিতি

 

হাসান, তারেক হাসান পুরো নাম হাসান মোহাম্মাদ তারেক। দুটো ছাগল আল্লাহ পাকের রাহে কুরবানি করে আকিকা দিয়ে লেখকের বাবা-মা তার এই নাম রেখেছেন। তিনি পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, বিবিএ তে, ব্যাংকিং বিভাগে  লেখাটি  তার সামহোয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে এটিই কোন ব্লগে তার প্রথম লিখা ভাল লাগবে, এমন কোন কথা নেই ভাল না লাগলে লেখক খুবই দুঃখিত কারন তিনি কিছুই করতে পারবেন না আপনার জন্যে এক্ষেত্রে  তার মন্তব্য:

আমি লিখি নিজের জন্যই লিখি আমাকে লিখতে হয় না লিখলে মস্তিষ্ক বিদ্রোহ করে বসে, হাতগুলো নিশপিশ করে তাই লিখি কারও মনোরঞ্জন করবার উদ্দেশ্যে আমার লিখা নয় আমার আগে প্রমথ চৌধুরী প্রথমে কথাটা পরিষ্কার ভাষায় বলে গেছেনকাজেই মাইনাস দিয়ে আমার লিখাকে হেয় করবার সুযোগ নেই

লেখক নিজের জন্যেই লেখেন  ধন্যবাদ আপনাকে।

No comments:

Post a Comment