১। ফলের নাম কি 'গন্দম' ছিল?
আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি কথা - আদম এবং হাওয়া (আঃ) ‘গন্দম’ গাছের ফল খেয়েছিলেন।
কথাটি পুরোপুরি সত্যি নয়। কুরআন কিংবা সহীহ হাদিসের কোথাও এই গন্দম নামক ফল বা গাছের কথা উল্লেখ নেই।
মূলকথা, আদম ও হাওয়া (আঃ) কে আল্লাহ বিশেষ একটি গাছের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে তাঁরা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে সেই গাছের নিকটবর্তী হয়েছিলেন এবং সেই গাছের ফল খেয়েছিলেন। তবে কী ছিল সেই ফল কিংবা গাছটির নাম - এই ব্যাপারে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কিছুই বলেননি আমাদেরকে।
মূলকথা, আদম ও হাওয়া (আঃ) কে আল্লাহ বিশেষ একটি গাছের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে তাঁরা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে সেই গাছের নিকটবর্তী হয়েছিলেন এবং সেই গাছের ফল খেয়েছিলেন। তবে কী ছিল সেই ফল কিংবা গাছটির নাম - এই ব্যাপারে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কিছুই বলেননি আমাদেরকে।
২। শুধু হাওয়া (আঃ) কি দায়ী?
সমাজে বহুল প্রচলিত আরেকটি ভুল ধারনা - আদম (আঃ) কে হাওয়া (আঃ) নিজে সেই বিশেষ গাছের ফল খেতে দিয়েছিলেন।
হাওয়া (আঃ) কি সত্যিই আদম (আঃ) কে সেই বিশেষ গাছের ফল খেতে দিয়েছিলেন? চলুন দেখি নেই, পবিত্র কুরআনে কি আছে এই ব্যাপারেঃ
“হে আদম তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর। অতঃপর সেখান থেকে যা ইচ্ছা খাও তবে এ বৃক্ষের কাছে যেয়োনা, তাহলে তোমরা গুনাহগার হয়ে যাবে। অতঃপর শয়তান উভয়কে প্ররোচিত করল, যাতে তাদের অঙ্গ, যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়। সে বললঃ তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করেননি; তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও-কিংবা হয়ে যাও চিরকাল বসবাসকারী। সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বললঃ আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্খী। অতঃপর প্রতারণাপূর্বক তাদেরকে সম্মত করে ফেলল। অনন্তর যখন তারা বৃক্ষ আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের সামনে খুলে গেল এবং তারা নিজের উপর বেহেশতের পাতা জড়াতে লাগল। তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব।”
[আল কুরআন, সূরা আল-আরাফ, আয়াত নং. ১৯-২৩]
পবিত্র কুরআনের কোথাও এই কথা উল্লেখ নেই যে হাওয়া-ই আদম (আঃ) কে সেই ফল খেতে দিয়েছিলেন। এ তো বরং ইয়াহুদি এবং খ্রিস্টানদের দৃঢ় বিশ্বাস যে সাপের সাহায্যে শয়তান হাওয়া (আঃ) কে প্ররোচিত করেছিল সেই গাছের ফলটি খেতে, নিজে খাওয়ার পর হাওয়া (আঃ) স্বয়ং তা আদম (আঃ) কে খেতে দিয়েছিলেন।
একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিন, বাইবেলের Old Testament-এ কীভাবে অপবাদ দেয়া হয়েছে আমাদের আদিমাতা হাওয়া (আঃ) এর ওপরঃ
“…সেই নারী (হাওয়া) দেখল গাছটা সুন্দর এবং এর ফল সুস্বাদু, আর এই ভেবে সে উত্তেজিত হল যে ঐ গাছ তাকে জ্ঞান দেবে। তাই নারী গাছটা থেকে ফল নিয়ে খেল। তার স্বামী (আদম) সেখানেই ছিল, তাই স্বামীকেও ফলের একটা টুকরো দিল আর স্বামীও সেটা খেল।”
[বাইবেল, জেনেসিস, ৩/৬]
“…আদম প্রভুকে বলল, আমার জন্য আপনি যে নারী তৈরি করেছিলেন, সেই নারী গাছটা থেকে আমায় ফল খেতে দিয়েছিল, তাই আমি সেটা খেয়েছি।”
[বাইবেল, জেনেসিস, ৩/১২]
“…(সেই অপরাধের কারনে) প্রভু নারীকে বললেন, ‘তুমি যখন গর্ভবতী হবে, সেই দশাটাকে আমি দুঃসহ করে তুলব, তুমি অসহ্য ব্যথাতে সন্তানের জন্ম দেবে। তুমি তোমার স্বামীকে আকুলভাবে কামনা করবে, কিন্তু সে তোমার ওপর কর্তৃত্ব করবে।’”
[বাইবেল, জেনেসিস, ৩/১৬]
কুরআনের কোথাও একতরফাভাবে হাওয়া (আঃ) কে দোষ দেয়া হয়নি। বরং আদম (আঃ) এবং হাওা (আঃ) দুজনকেই সমানভাবে তিরস্কার করা হয়েছে। কিংবা এটাও বলা হয়নি যে হাওয়া (আঃ) এর ভুলের কারনেই জান্নাত থেকে দুজনকে বিতাড়িত করা হয়েছিল বা হাওয়া (আঃ) আদম (আঃ)-কে বিপথে পরিচালিত করেছিলেন।
মূলকথা, আদম এবং হাওয়া (আঃ) দুজনেই সমান অপরাধ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন, আর আল্লাহ সুবহান ওয়া তায়ালা তাঁদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। আর গর্ভধারণের মত এত পবিত্র যাতনা কোন অবস্থাতেই মা দের ওপর আল্লাহ সুবহান ওয়া তায়ালার চাপিয়ে দেয়া শাস্তি হতে পারেনা।
৩। শয়তান কি সাপ ও ময়ূরের সাহায্য নিয়েছিল বা আকৃতি ধারন করেছিল?
শয়তান সাপ ও ময়ূরের সাহায্যে আদম এবং হাওয়া (আঃ)-কে সেই বিশেষ গাছের ফল খেতে প্ররোচিত করেছিলেন বলে সমাজে যেসব কথা প্রচলিত আছে, সেগুলো সবই বাইবেলের Old Testament-এর কথা, কুরআন কিংবা সহীহ হাদিসের নয়। এই ব্যাপারের জন্য জেনেসিস অধ্যায়ের ৩/১-৪ পড়ে দেখুন।
ইমাম ইবনে কাসিরের মতে, মুসলিম সমাজে প্রচলিত উপরের সব ঘটনাগুলো ইসরায়েলিদের বর্ননা থেকে প্রাপ্ত – এগুলোর ওপর বিশ্বাস করা যায়না।
আল্লাহু আলাম।
----------------
রেফারেন্সঃ
১. হাদীসের নামে জালিয়াতি
ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, PHD (Riyad), MA (Riyad)
সহযোগী অধ্যাপক, আল হাদীস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
২. ইসলামে নারী বনাম ইয়াহুদি-খ্রিস্টান ধর্মে নারী
ড. শরীফ আব্দুল আযিম, PHD, (Canada)
No comments:
Post a Comment