এক.
আন্টি, আমি আমার এই দীর্ঘ জীবনে কোন মাদ্রাসায় রামদা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কোন ‘কোপা-কুপি’ দেখিনি, এমন ঘটনা শুনিওনি। না দেখেছি সেখানে গান দিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হওয়া আর কারো আহত হওয়া। যা দেখেছি তা হচ্ছে মুক্ত চিন্তার আধার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুই দলের মধ্যে গণ্ডগোল; হাত-পা হারিয়ে খোঁড়া-কানা-নুলো হয়ে বসে থাকা নয়ত একেবারেই ইহ জগত ত্যাগ করা।
দ্যা আইরনি ইয দ্যাট, প্রথমদেরকেই কেন যেন জঙ্গি বলা হয়। অবশ্য জঙ্গ বা যুদ্ধ করা তো মানুষেরই সাজে; শৃগাল-কুকুরের মধ্যে তো যুদ্ধ হয়না। যেটা হয় সেটা কামড়াকামড়ি।
দুই.
কালেভদ্রে পত্রিকার পাতায় যখন দেখি, “পড়া না পারায় মাদ্রাসা ছাত্রকে বেদম প্রহার আর নির্যাতন”, আমি তখন এক চিলতে মুচকি হাসি দিয়েই অন্য খবরে মনযোগ দেই।
কেন? সেটা বলার আগে আন্টি আপনাকে একটা কাহিনী বলি। কাহিনীটা ফেইসবুকের কোন ভাইয়ের পোস্ট থেকে দেখেছিলাম।
প্রশ্নোত্তরের এক পর্যায়ে এক শাইখকে এলাকার কিছু মানুষ বললেন,
‘শাইখ, আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবকে মসজিদে ঢোকার সময় বাম পা দিয়ে ঢুকতে দেখেছি। উনাকে কি ইমাম হিসেবে রাখা যাবে?’
কথা শুনে শাইখ বললেন, ‘এই যদি কারন হয় তবে সেই ইমাম সাহবেকে অবশ্যই রাখা উচিত, আরও বেশি করে রাখা উচিত।’
বুদ্ধিমান শাইখ বুঝতে পেরেছিলেন, ইমাম সাহেবকে তাড়ানোর জন্য মানুষগুলো একটা অজুহাত খুঁজছিল। সে কারনে ইমাম সাহেবের কোন একটা দোষ বের করার জন্য একবারে ওঁত পেতে রয়েছিল তারা। আর কিছুই না পেয়ে শেষমেশ এই বাম পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করার ঘটনাটাই নিয়ে আসে।
মোর অর লেস কাহিনীটা এমনই ছিল।
মুক্তবুদ্ধির চর্চা শেখানোর জন্য যেই প্রতিষ্ঠানগুলো আছে না – স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়, এগুলোতে পড়াশোনার আড়ালে সংগঠিত ছাত্র-ছাত্রীর স্ক্যান্ডাল, ছাত্রী-শিক্ষক স্ক্যান্ডাল, ড্রাগস, আর্মস ডিলিং ইত্যাদি অপরাধের এত লম্বা ফিরিস্তি যে কাগুজেওয়ালারা কোন কূল পায়না, বিরক্ত হয়ে মানুষও সেগুলো আর গিলেনা। বিমুখ হয়ে তারা ওঁত পেতে থাকে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে। ছাত্র পেটানোর মত দুই-একটা যা পাবে সেটাই তাদের লাভ।
তিন.
আমাদের বিযনেস স্টাডিযের শিক্ষকরা আমাদের শেখায় কীভাবে কর্পোরেট দুনিয়ার রথি-মহারথীদের সাথে লিংক করা যায়, নেটওয়ার্ক মেইন্টেইন করা যায় নিজেদের সুন্দর আর ব্রাইট একটা ফিউচারের জন্য। কিন্তু সব রিসোর্স মুঠিতে নিয়ে মাথার ওপর কুর্সিতে যিনি আছেন, তাঁর সাথে যে কীভাবে লিংক করা যায় সেটা আমরা শিখতে পারিনা কখনো।
এটা আবার শেখায় আপনার অপছন্দনীয় সেই মাদ্রাসাগুলোতে। মাদ্রাসার ‘পশ্চাৎপদ’ ছেলে-মেয়েগুলো শিখে নেয় কীভাবে যাবতীয় ভাণ্ডারের মালিক, যাবতীয় কল্যাণ-অকল্যাণের মালিকের সাথে লিংক করা যায় সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য।
আর হ্যাঁ, তাঁদের কাছে ভবিষ্যতের সংজ্ঞা লিটারেলি ইনফিনিট, মৃত্যুর পর পর্যন্তও বিস্তৃত।
আন্টি, আপনি আর আপনার প্রতিষ্ঠান কি পারবে আমার মৃত্যুর পর পর্যন্তও বিস্তৃত সেই ভবিষ্যতকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব নিতে?
চার.
আন্টি আপনি বললেন, “সুরের ধারার এই বাচ্চাগুলো মুক্তচিন্তার শিক্ষা পেয়ে আত্মসম্মানবোধে বেড়ে উঠছে...”
আন্টি, আমার গ্রামে আমাদের শহরের সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা আছে, মাদ্রাসার পাশে আছে মসজিদ। অনেক ছোট বেলায় এক জুমু’আতে মাদ্রাসার ছাত্রদের পাশে বসে বয়ান শুনছিলাম। আমার মোটা শরীরের একাংশ নিয়ে এক ছাত্রের পাঞ্জাবীর ওপর ভর দিয়ে বসে রয়েছিলাম। সুন্নাত নামযের জন্য ছেলেটা দাঁড়ানো সময় এক টানে পঁচ করে তাঁর পকেট থেকে ওপরের অংশ ছিঁড়ে যায়। ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া এই আমার দিকে তাকিয়ে সে একটা হাসি দিয়েছিল মাত্র, আর কিছুই বলেনি।
আন্টি, আপনার বাড়িতে যেই ডাল রান্না হয়, সেই ডালে এক বোল পানি মিশিয়ে তাঁদের এক বেলার খাবার হিসেবে খেতে দিলেও বিসমিল্লাহ্ বলে তাকদিরে আল্লাহ এইই রেখেছিলেন ভেবে আল্লাহর শুকর-গুঁজার করে খেয়ে নিবে, আত্মসম্মানে লাগাবেনা তাঁরা। ছেলে-মেয়েদের ইংরেজি-ম্যাথের শিক্ষকদের মাসে পাঁচ হাজার টাকা সম্মানি দিয়ে আর কুরআন শেখানোর জন্য মাদ্রাসার একজন ছাত্রকে পাঁচশ টাকা আপনি ধরিয়ে দেন, সন্তুষ্ট চিত্তে আপনার পাঁচশ টাকা নিবে সে, আত্মসম্মানে লাগাবেনা তাঁরা।
কিন্তু আন্টি, শুধু একবার আপনার কথা বা লেখনি দিয়ে আল্লাহ কিংবা তাঁর রাসূলকে আঘাত করুন, আপনাকে তাঁরা ছাড়বে না কখনো।
তাঁদের সমস্ত সম্মান আর মর্যাদার কেন্দ্রবিন্দু আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল – নিজে নয়।
---------------- --------------- ---------
একটু অন্য ধাঁচে কিছু কথা বলি আন্টি,
পাঁচ.
গেল বছর ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থীর করা একটা রেকর্ড আমি কখনো ভুলবোনা। বি এবং ডি ইউনিট থেকে মানুষটা প্রথম স্থান অধিকার করে। কথাটা অনেক ছোট। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় একবার ভেবে দেখুন আন্টি, কী বললাম আমি - “বি এবং ডি ইউনিট থেকে মানুষটা প্রথম স্থান অধিকার করে”।
আপনার অজানা নয়, বি ইউনিটে পরীক্ষা দেয় বাংলাদেশের মানবিক বিভাগের সমস্ত শিক্ষার্থী। সংখ্যাটা পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজারের মত হবে। অন্যদিকে ঢাবির ডি ইউনিট হল প্রতি আসনে পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা বিচারে সবচেয়ে বড় আর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট – সাইন্স, বিযনেস স্টাডিয আর আর্টসের সবাই অ্যাপ্লাই করে, তিনগ্রুপের মানুষগুলোই একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে, আসন প্রতি গেল বার ৫৪ জন লড়েছিল।
ও আচ্ছা...আসল কথাটাই বলিনি আপনাকে। গেলবার এই দুই ইউনিট থেকেই এক মাদ্রাসার ছাত্র প্রথম হয়েছিল। তাঁর নাম আব্দুর রহমান। (http://goo.gl/TLeC7c)
এটা কোন কথা হল! ছোট বেলা থেকেই মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে করে বড় হওয়া এই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর গালে এভাবে কোথাকার কোন মাদ্রাসার এক ছেলে এভাবে চপেটাঘাত করে দিবে, তাও আবার মুক্তিবুদ্ধি চর্চার প্রধান কেন্দ্র সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ করার সময়?
ছয়.
প্রেম করার জন্য ঢাকার অনেক সেইফ কিছু প্লেইসের মধ্যে টিএসসি একটা। এখানে ভেতরের মানুষ যেমন আছে, আছে বাইরের মানুষও। ঢাকার বিভিন্ন আনাচে-কানাচে থেকে বাবুগুলো তার বাবুদের নিয়ে এখানে চলে আসে।
এত এত বছর ধরে সকাল-বিকেল-দিন-দুপুর-রাতে এর পাশ দিয়ে চলাফেরা করলাম, শুশ্রুমণ্ডিত, টুপি-জোব্বা পরিহিত মাদ্রাসার কোন ছাত্রকে দেখলামনা বুরকাওয়ালী-হিজাবি কোন মেয়ের সাথে। আচ্ছা আন্টি, এই মাদ্রাসার ছেলে-মেয়ে গুলো কি প্রেম করতে শিখেনি? এতো ব্যাকডেটেড হলে কি হয়? দুনিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে চলবে কিভাবে? স্যারের তোমরা যারা কলাম পড়েনি?
“যে বয়সে তাদের মুক্তচিন্তা শেখার কথা, গান গাওয়ার কথা, নাটক করার কথা, আদর্শ নিয়ে ভাবালুতায় ডুবে যাওয়ার কথা, সেই সময় তারা ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে নিজেদের আটকে রাখতে শেখে, সাম্প্রদায়িক হতে শেখে, ধর্মান্ধ হতে শেখে। যে বয়সে ছেলে আর মেয়ের ভেতর সহজ ভালো লাগা ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা সেই অনুভূতিগুলোকে অশ্রদ্ধা করতে শেখে”।
তারা মনে হয় বিয়ে করা বউয়ের সাথে বাড়িতেই প্রেম করে, গার্লফ্রেইন্ডের সাথে প্রেম করেনা। আর এই কারনে আমাদের অর্থনীতিতে অনেক লস হচ্ছে। গার্লফ্রেইন্ড নিয়ে রেস্টুরেন্ট না খাওয়ার কারনে যা বিক্রি হবার কথা ছিল তার চেয়ে কম হচ্ছে, ব্যবসা কম হচ্ছে। ব্যবসা কম হচ্ছে মোবাইল কোম্পানিগুলোর, হোটেল মালিকদের, মেডিসিনের। আমি এগুলো খুলে আপনাকে বিস্তারিত বলতে পারবোনা, আমার লজ্জা করবে। এই লসগুলো বুঝতে পারি বিযনেসের ওপর গ্র্যাজুয়েটেড আমরা এই কর্পোরেট স্লেইভরা, তারা বুঝবেনা তাদের কারনে জিডিপি কত কমে যাচ্ছে।
সাত.
মানুষ মরণশীল। আমি-আপনিও একদিন মারা যাব। আচ্ছা আন্টি, আপনি তো মুসলিম, তাইনা? আপনার মৃত্যুর পর আপনার কানের পাশে কোন শিল্পী কোন রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবে, কারা কারা সুরের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করবে, সেটা কী ঠিক করে দিয়েছেন?
-বন্যান্টির সমীপে (http://goo.gl/XZfLTa)
আন্টি, আমি আমার এই দীর্ঘ জীবনে কোন মাদ্রাসায় রামদা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কোন ‘কোপা-কুপি’ দেখিনি, এমন ঘটনা শুনিওনি। না দেখেছি সেখানে গান দিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হওয়া আর কারো আহত হওয়া। যা দেখেছি তা হচ্ছে মুক্ত চিন্তার আধার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুই দলের মধ্যে গণ্ডগোল; হাত-পা হারিয়ে খোঁড়া-কানা-নুলো হয়ে বসে থাকা নয়ত একেবারেই ইহ জগত ত্যাগ করা।
দ্যা আইরনি ইয দ্যাট, প্রথমদেরকেই কেন যেন জঙ্গি বলা হয়। অবশ্য জঙ্গ বা যুদ্ধ করা তো মানুষেরই সাজে; শৃগাল-কুকুরের মধ্যে তো যুদ্ধ হয়না। যেটা হয় সেটা কামড়াকামড়ি।
দুই.
কালেভদ্রে পত্রিকার পাতায় যখন দেখি, “পড়া না পারায় মাদ্রাসা ছাত্রকে বেদম প্রহার আর নির্যাতন”, আমি তখন এক চিলতে মুচকি হাসি দিয়েই অন্য খবরে মনযোগ দেই।
কেন? সেটা বলার আগে আন্টি আপনাকে একটা কাহিনী বলি। কাহিনীটা ফেইসবুকের কোন ভাইয়ের পোস্ট থেকে দেখেছিলাম।
প্রশ্নোত্তরের এক পর্যায়ে এক শাইখকে এলাকার কিছু মানুষ বললেন,
‘শাইখ, আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবকে মসজিদে ঢোকার সময় বাম পা দিয়ে ঢুকতে দেখেছি। উনাকে কি ইমাম হিসেবে রাখা যাবে?’
কথা শুনে শাইখ বললেন, ‘এই যদি কারন হয় তবে সেই ইমাম সাহবেকে অবশ্যই রাখা উচিত, আরও বেশি করে রাখা উচিত।’
বুদ্ধিমান শাইখ বুঝতে পেরেছিলেন, ইমাম সাহেবকে তাড়ানোর জন্য মানুষগুলো একটা অজুহাত খুঁজছিল। সে কারনে ইমাম সাহেবের কোন একটা দোষ বের করার জন্য একবারে ওঁত পেতে রয়েছিল তারা। আর কিছুই না পেয়ে শেষমেশ এই বাম পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করার ঘটনাটাই নিয়ে আসে।
মোর অর লেস কাহিনীটা এমনই ছিল।
মুক্তবুদ্ধির চর্চা শেখানোর জন্য যেই প্রতিষ্ঠানগুলো আছে না – স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়, এগুলোতে পড়াশোনার আড়ালে সংগঠিত ছাত্র-ছাত্রীর স্ক্যান্ডাল, ছাত্রী-শিক্ষক স্ক্যান্ডাল, ড্রাগস, আর্মস ডিলিং ইত্যাদি অপরাধের এত লম্বা ফিরিস্তি যে কাগুজেওয়ালারা কোন কূল পায়না, বিরক্ত হয়ে মানুষও সেগুলো আর গিলেনা। বিমুখ হয়ে তারা ওঁত পেতে থাকে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে। ছাত্র পেটানোর মত দুই-একটা যা পাবে সেটাই তাদের লাভ।
তিন.
আমাদের বিযনেস স্টাডিযের শিক্ষকরা আমাদের শেখায় কীভাবে কর্পোরেট দুনিয়ার রথি-মহারথীদের সাথে লিংক করা যায়, নেটওয়ার্ক মেইন্টেইন করা যায় নিজেদের সুন্দর আর ব্রাইট একটা ফিউচারের জন্য। কিন্তু সব রিসোর্স মুঠিতে নিয়ে মাথার ওপর কুর্সিতে যিনি আছেন, তাঁর সাথে যে কীভাবে লিংক করা যায় সেটা আমরা শিখতে পারিনা কখনো।
এটা আবার শেখায় আপনার অপছন্দনীয় সেই মাদ্রাসাগুলোতে। মাদ্রাসার ‘পশ্চাৎপদ’ ছেলে-মেয়েগুলো শিখে নেয় কীভাবে যাবতীয় ভাণ্ডারের মালিক, যাবতীয় কল্যাণ-অকল্যাণের মালিকের সাথে লিংক করা যায় সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য।
আর হ্যাঁ, তাঁদের কাছে ভবিষ্যতের সংজ্ঞা লিটারেলি ইনফিনিট, মৃত্যুর পর পর্যন্তও বিস্তৃত।
আন্টি, আপনি আর আপনার প্রতিষ্ঠান কি পারবে আমার মৃত্যুর পর পর্যন্তও বিস্তৃত সেই ভবিষ্যতকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব নিতে?
চার.
আন্টি আপনি বললেন, “সুরের ধারার এই বাচ্চাগুলো মুক্তচিন্তার শিক্ষা পেয়ে আত্মসম্মানবোধে বেড়ে উঠছে...”
আন্টি, আমার গ্রামে আমাদের শহরের সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা আছে, মাদ্রাসার পাশে আছে মসজিদ। অনেক ছোট বেলায় এক জুমু’আতে মাদ্রাসার ছাত্রদের পাশে বসে বয়ান শুনছিলাম। আমার মোটা শরীরের একাংশ নিয়ে এক ছাত্রের পাঞ্জাবীর ওপর ভর দিয়ে বসে রয়েছিলাম। সুন্নাত নামযের জন্য ছেলেটা দাঁড়ানো সময় এক টানে পঁচ করে তাঁর পকেট থেকে ওপরের অংশ ছিঁড়ে যায়। ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়া এই আমার দিকে তাকিয়ে সে একটা হাসি দিয়েছিল মাত্র, আর কিছুই বলেনি।
আন্টি, আপনার বাড়িতে যেই ডাল রান্না হয়, সেই ডালে এক বোল পানি মিশিয়ে তাঁদের এক বেলার খাবার হিসেবে খেতে দিলেও বিসমিল্লাহ্ বলে তাকদিরে আল্লাহ এইই রেখেছিলেন ভেবে আল্লাহর শুকর-গুঁজার করে খেয়ে নিবে, আত্মসম্মানে লাগাবেনা তাঁরা। ছেলে-মেয়েদের ইংরেজি-ম্যাথের শিক্ষকদের মাসে পাঁচ হাজার টাকা সম্মানি দিয়ে আর কুরআন শেখানোর জন্য মাদ্রাসার একজন ছাত্রকে পাঁচশ টাকা আপনি ধরিয়ে দেন, সন্তুষ্ট চিত্তে আপনার পাঁচশ টাকা নিবে সে, আত্মসম্মানে লাগাবেনা তাঁরা।
কিন্তু আন্টি, শুধু একবার আপনার কথা বা লেখনি দিয়ে আল্লাহ কিংবা তাঁর রাসূলকে আঘাত করুন, আপনাকে তাঁরা ছাড়বে না কখনো।
তাঁদের সমস্ত সম্মান আর মর্যাদার কেন্দ্রবিন্দু আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল – নিজে নয়।
---------------- --------------- ---------
একটু অন্য ধাঁচে কিছু কথা বলি আন্টি,
পাঁচ.
গেল বছর ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থীর করা একটা রেকর্ড আমি কখনো ভুলবোনা। বি এবং ডি ইউনিট থেকে মানুষটা প্রথম স্থান অধিকার করে। কথাটা অনেক ছোট। কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় একবার ভেবে দেখুন আন্টি, কী বললাম আমি - “বি এবং ডি ইউনিট থেকে মানুষটা প্রথম স্থান অধিকার করে”।
আপনার অজানা নয়, বি ইউনিটে পরীক্ষা দেয় বাংলাদেশের মানবিক বিভাগের সমস্ত শিক্ষার্থী। সংখ্যাটা পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজারের মত হবে। অন্যদিকে ঢাবির ডি ইউনিট হল প্রতি আসনে পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা বিচারে সবচেয়ে বড় আর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট – সাইন্স, বিযনেস স্টাডিয আর আর্টসের সবাই অ্যাপ্লাই করে, তিনগ্রুপের মানুষগুলোই একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে, আসন প্রতি গেল বার ৫৪ জন লড়েছিল।
ও আচ্ছা...আসল কথাটাই বলিনি আপনাকে। গেলবার এই দুই ইউনিট থেকেই এক মাদ্রাসার ছাত্র প্রথম হয়েছিল। তাঁর নাম আব্দুর রহমান। (http://goo.gl/TLeC7c)
এটা কোন কথা হল! ছোট বেলা থেকেই মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে করে বড় হওয়া এই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর গালে এভাবে কোথাকার কোন মাদ্রাসার এক ছেলে এভাবে চপেটাঘাত করে দিবে, তাও আবার মুক্তিবুদ্ধি চর্চার প্রধান কেন্দ্র সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ করার সময়?
ছয়.
প্রেম করার জন্য ঢাকার অনেক সেইফ কিছু প্লেইসের মধ্যে টিএসসি একটা। এখানে ভেতরের মানুষ যেমন আছে, আছে বাইরের মানুষও। ঢাকার বিভিন্ন আনাচে-কানাচে থেকে বাবুগুলো তার বাবুদের নিয়ে এখানে চলে আসে।
এত এত বছর ধরে সকাল-বিকেল-দিন-দুপুর-রাতে এর পাশ দিয়ে চলাফেরা করলাম, শুশ্রুমণ্ডিত, টুপি-জোব্বা পরিহিত মাদ্রাসার কোন ছাত্রকে দেখলামনা বুরকাওয়ালী-হিজাবি কোন মেয়ের সাথে। আচ্ছা আন্টি, এই মাদ্রাসার ছেলে-মেয়ে গুলো কি প্রেম করতে শিখেনি? এতো ব্যাকডেটেড হলে কি হয়? দুনিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে চলবে কিভাবে? স্যারের তোমরা যারা কলাম পড়েনি?
“যে বয়সে তাদের মুক্তচিন্তা শেখার কথা, গান গাওয়ার কথা, নাটক করার কথা, আদর্শ নিয়ে ভাবালুতায় ডুবে যাওয়ার কথা, সেই সময় তারা ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে নিজেদের আটকে রাখতে শেখে, সাম্প্রদায়িক হতে শেখে, ধর্মান্ধ হতে শেখে। যে বয়সে ছেলে আর মেয়ের ভেতর সহজ ভালো লাগা ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা সেই অনুভূতিগুলোকে অশ্রদ্ধা করতে শেখে”।
তারা মনে হয় বিয়ে করা বউয়ের সাথে বাড়িতেই প্রেম করে, গার্লফ্রেইন্ডের সাথে প্রেম করেনা। আর এই কারনে আমাদের অর্থনীতিতে অনেক লস হচ্ছে। গার্লফ্রেইন্ড নিয়ে রেস্টুরেন্ট না খাওয়ার কারনে যা বিক্রি হবার কথা ছিল তার চেয়ে কম হচ্ছে, ব্যবসা কম হচ্ছে। ব্যবসা কম হচ্ছে মোবাইল কোম্পানিগুলোর, হোটেল মালিকদের, মেডিসিনের। আমি এগুলো খুলে আপনাকে বিস্তারিত বলতে পারবোনা, আমার লজ্জা করবে। এই লসগুলো বুঝতে পারি বিযনেসের ওপর গ্র্যাজুয়েটেড আমরা এই কর্পোরেট স্লেইভরা, তারা বুঝবেনা তাদের কারনে জিডিপি কত কমে যাচ্ছে।
সাত.
মানুষ মরণশীল। আমি-আপনিও একদিন মারা যাব। আচ্ছা আন্টি, আপনি তো মুসলিম, তাইনা? আপনার মৃত্যুর পর আপনার কানের পাশে কোন শিল্পী কোন রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবে, কারা কারা সুরের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করবে, সেটা কী ঠিক করে দিয়েছেন?
-বন্যান্টির সমীপে (http://goo.gl/XZfLTa)
No comments:
Post a Comment