ক্রিমিনাল সাইকোলজি নিয়ে আমি যতটা জানি, একজন ব্যক্তি সত্যিই কি অপরাধী না নির্দোষ তা বোঝা যায় Excecution-এর ঠিক আগের মুহুর্তগুলোতে।
সত্যিকারের অপরাধী হলে সেই ব্যক্তি ভেঙ্গে পড়ে, মুষড়ে পড়ে, মনে মনে একটা গিলটি ফিল করে – কী করলাম এই আমি, কেন করতে গেলাম এই কাজ। খুব বিলাপ করে সে।
তবে নির্দোষ হয়ে থাকলে চিত্রটা একেবারে ভিন্ন। খুব শক্ত আর দৃঢ় চেতা থাকে মানুষটা। সে বুঝতেই পারে যে তার কোন দোষ ছিলনা কিন্তু তাকে ফাঁসানো হয়েছে। পরিবারের মায়ায় পড়ে হয়ত কাঁদে, কিন্তু বিলাপ করেনা। থিস্ট হলে সৃষ্টিকর্তার কাছে সে এর বিচার চায়।
Dronachariya (ড্রোনাচার্য) স্যার বলেছেন, বাক্যে ‘কিন্তু’ ব্যবহার নাকি তার কাছে দুনম্বরীর দুনম্বরী মনে হয়। তাই আমি ‘কিন্তু’ যুক্ত যৌগিক বাক্যের (Compound Sentence) ধারের কাছে না গিয়ে একেবারেই বলে ফেলি, একাত্তরের গনহত্যা আর মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনের সুষ্ঠু বিচার আমি চাইই চাই, হু এভার দ্যা ক্রিমিনাল ওয়ায। সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থায় অপরাধ প্রমাণ হওয়া মাত্রই তাকে ধরে এক্সিকিউট করে দেয়া হোক, নো মার্সি।
কিন্তু একটা সমস্যা হচ্ছে, সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায় তা তো এই দেশে নেই রে বাবা।
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার একটা কলঙ্কজনক অধ্যায় জজমিয়া।
র্যাবের বদৌলতে পঙ্গুত্ব বরণ করে নেয়া লিমন আরেকটা কলঙ্কজনক অধ্যায়।
চারপাশে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আর বন্ধুদের উসিলা করে আল্লাহ এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে অভিজিতের খুনি ফারাবি নয় বরং অন্য কেউ; ফারাবির মাথায় ফাঁসির পয়গাম ঝুলত নাহলে।
জেএমবিএর সাথে সম্পৃক্ত থাকার মিথ্যে অভিযোগে ডক্টর আসাদুল্লাহ আল গালিবকে গ্রেপ্তার করে হেনস্তা করেছিল তৎকালীন সরকার।
মুফতি জসিমুদ্দীন রহমানিকে আনসার বাংলার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কয়েকবছর ধরে গ্রেপ্তার করে রেখেছে লীগ সরকার।
Section 57 ‘ভঙ্গ’ করার অভিযোগে মাহমুদুর রহমান বিগত কয়েকবছর ধরে কারাগারে।
একই সেকশনের দোহাই দিয়ে আর একটু হলেই ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনামকে ঢুকিয়ে দেয়া হত চৌদ্দশিকের গারদে, হিযবুত তাহরিরের একটা লিফ্লেট ছাপানোর ‘অপরাধে’।
আমার খুব অবাক লাগে একটা ব্যাপার ভাবলে। এই যে ধরুন, চার বছর হয়ে গেল সাগর-রুনীর হত্যাকারীকে(দের) এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলনা। কিন্তু চুয়াল্লিশ বছর আগে কে কী অপরাধ করেছিল তা গুনে গুনে শাস্তি বাবদ ফাঁসি দিয়ে ফেলতে পারছি ঠিকই। পিলখানা ম্যাসাকারের শাস্তি দোষী ব্যক্তিরাই পেয়েছে নাকি উদর পিণ্ডি বুঁদর ঘাড়ে চাপানো হয়েছে সেটা সবচেয়ে ভাল জানে একমাত্র আরশে আজিমের মালিক।
যেই তল্লাটে, যেই দেশে, যেই সম্রাজ্যে সৃষ্টিকর্তা এবং তাঁর প্রেরিত দূতকে নিয়ে কেউ বা কোন গোষ্ঠী কটূক্তি করলে বিনিময়ে তারা পুলিশি প্রোটেকশন পায়, ‘প্রগতিশীল’, ‘প্রথা বিরোধী’ লেখক হিসেবে স্বীকৃতি পায় কিন্তু সরকার আর সরকার পরিবারের কাউকে নিয়ে সমালোচনা করলে মানুষকে যেতে হয় কারাগারে, সেই অঞ্চলের আইন, শাসন আর বিচার ব্যবস্থা সামগ্রিক ভাবে যে কোন আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত সেটা বোঝার জন্য খুব তাকলিফ পোহানোর কথা নয়।
আল্লাহ সুবহান ওয়া তায়ালা হাশরের ময়দান কেন তৈরি করবেন সেটার একটা প্রয়োজনীয়তা বোঝা যায় এই বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার দিকে তাকালেই। কিছু বিচার আর ফয়সালা সেখানেই হওয়া দরকার। সত্যিকারের রাজাকার কারা সেটা সবাই চিনতে পারবে তখন।
আর শাহাবাগের গতরাতের ‘আনন্দ মিছিল’ আর ‘লোকে লোকারণ্য’ কিছুই প্রমাণ করেনা আসলে। শাহাবাগ নিয়ে আমার মজার উপলব্ধিটা পড়তে পারেন এখানে, যদি রুচি হয় আর কী। :) (http://goo.gl/gfBlm1)
সবাইকে ফযরের শুভেচ্ছা।
No comments:
Post a Comment