কালেক্টিভলি সমাজের মানুষ যতগুলো ভুল করে সেগুলোর মধ্যে একটা হল কেউ আত্মহত্যা করলে তার এই আত্মহত্যার ব্যাপারটাকে খুব সিম্প্যাথেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। আত্মহত্যা করার পেছনে দায়ী ফ্যাক্টরগুলোর জন্য প্রিভেন্টিভ স্টেপস নেয়ার ব্যাপারটাকে ওভারলুক করা হয়। এতে আত্মহত্যার প্রতি পরোক্ষভাবে ইন্ধন যুগিয়ে দেয়া হয়, পটেনশিয়াল আত্মহত্যাকারীদের দের মনে এই ভাবনাটা ঢুকিয়ে দেয়া হয় – তুমি আত্মহত্যা করলে আমরাও এভাবে হায়-হতাশ করব তোমার জন্য, সমবেদনা জানাবো। ফলে যে মানুষটা বেঁচে থেকে কারও সিম্প্যাথি পায়না সে মানুষটা মরে গিয়ে সবার সিম্প্যাথি আদায় করতে চায়।
.
কথা বলছি গণিত ডিপার্ট্মেন্টে পড়া এক ছোটভাইকে নিয়ে। ঈদের দিন গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে সে। কলেজ লাইফে তার ‘রিলেশন’ হয় একটা মেয়ের সাথে। মেয়েটা এখন ডিএমসিতে পড়ে।রিলেশন ভেঙ্গে মেয়েটা আরেক ছেলের সাথে চলে যায় কিছুদিন আগে।
.
গতবছর বসুন্ধরা সিটিতে সেলফোন কিনতে গিয়ে এক বন্ধু বলে, ‘উপরে ফুড কোর্ট আছেনা? কদিন আগে ওখান থেকে নিচে লাফ মেরে এক ছেলে আত্মহত্যা করে।’
.
কিছুদিন পর জানতে পারি, ছেলেটা বুয়েটের ম্যাকানিকালে পড়ত। আত্মহত্যা করার সময় তার সামনে গার্লফ্রেইন্ড ছিল। ফুডকোর্টে গার্লফ্রেইন্ডের সামনে থেকেই ছেলেটা নিচ তলায় লাফ মারে। উপস্থিত সবাই বলছিল, তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল তখন।
.
স্মৃতির পাতা উল্টাতে উল্টাতে ভাবতে লাগলাম, আজ পর্যন্ত যতগুলো সুইসাইডাল কেসের কথা শুনেছি সেগুলোর কারণ কী কী ছিল যেন?
.
খুব বেশি ভাবতে হয়নি। প্রেম আর ভাল রেযাল্ট না করতে পারা – প্রথম চিন্তায়ই এই দুটো কারণ মনেপরে যায় কারণ পত্রিকার পাতা খুললে এগুলোই চোখে আসে। খুব রেয়ার কেইসে মনের মত ঈদের জামা না পাওয়া বা কলহের জের ধরে আত্মহত্যা করার কথা শুনেছি। পরিসংখ্যানগুলো নিয়ে একটা ‘পাই চার্ট’ বানালে প্রেমঘটিত কারণটাই যে পুরো চার্টের সিংহভাগ নিয়ে ফেলবে সেটা অনুমান করতে একটুও বেগ পেতে হয়নি। আর এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আমি ভয় পেয়েছি, প্রচণ্ড ভয়। দুদিনের পরিচয় একটা ছেলে বা মেয়ে বিট্রে করার কারনে আত্মহত্যা করা লাগবে – এমন ভয়ংকর চিন্তা যে মানুষের মাথায় গিজগিজ করতে পারে এটা ভেবেই আমি ভয় পেয়েছি।
.
পৃথিবীতে এমন একটা সময় ছিল যখন আমি সেই মেয়েটাকে চিনতাম না। আমি তখনও ভালো ছিলাম। কাজেই এমন একটা সময় যদি চলে আসে যখন জোর করে আবার সেই মেয়েটাকে না চেনা লাগে, তখনও আমার ভেঙ্গে পড়ার কোন কারণ ছিলনা। কিন্তু আমি ভেঙ্গে পড়েছি আর আত্মহত্যা করেছি – এটা আমার ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা। যে মানুষটার কারনে আমি আত্মহত্যা করেছি সে যদি জানতে পারত আমার ব্যক্তিত্ব এই পর্যায়ের দুর্বল, সে আদৌ আমার সাথে সম্পর্ক করতে চাইত না। শারীরিক দুর্বলতা মুখ বুজে মেনে নিলেও মানসিক দুর্বলতা সবাই-ই মেনে নিতে পারেনা, অন্তত ঘর করার জন্য তো নয়-ই।
.
প্রেম হালাল না হারাম সেই প্রসঙ্গে এখানে কোন কথা বলছিনা কারণ যারা আত্মহত্যা করছে বা করতে চাইছে তারা সেই হালাল-হারামের স্টেইজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই এই পর্যায়ে এসেছে। রিলেশনশিপে বিট্রেড হওয়া মানুষদের চাঙ্গা করার জন্য আমি সবসময়ই যেই অ্যাপ্রোচে আগাই – বিট্রেড হবার পর প্রথমেই উচিত দু রাকাত শুক্রিয়ার সালাত আদায় করা। কারণ এই যাত্রায় ধাক্কাটা শুধু নিজের ওপর দিয়ে গিয়েছে। এমনতো হতে পারত বাবা-মায়ের অমতে মেয়েটাকে বিয়ে করে ঘরে তুলে আনার পর সে মেয়েটা ডিভোর্স দিয়ে অন্যের কাছে চলে গিয়েছে। তখন বাবা-মায়ের সামনে নিজের মুখটা দেখাবেন কী করে? বাবা-মা অন্যকে মুখ দেখাবেন কী করে? এর চেয়ে কি ভালো না যে আপদ সময় থাকতে থাকতেই বিদায় নিয়েছে? আপনি কি বুঝতে পারছেন না এটা আপনার ওপর আল্লাহর একটা রহমত ছিল? যে বিট্রে করার সে বিট্রে করবেই, রিলেশনে থাকা অবস্থায় হোক বা বিয়ের পর, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে।
.
আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে সামনাসামনি যতগুলো ডিভোর্সের কাহিনী দেখেছি সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল প্রেম করে বিয়ে করা। অ্যারেঞ্জড ম্যারিজে দুটো পরিবারের মিলন যতটা গভীর হয় লাভ ম্যারিজে তততা গভীর হয়না। অ্যারেঞ্জড ম্যারিজে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একে অন্যকে নিজেদের বাবা-মেয়ের তরফ থেকে একটা উপহার মনে করেন যেটার স্বাদ প্রেম করে বিয়ে করার পর পাওয়া যায়না। কৃতজ্ঞতাবোধ, মায়া-মমতা আর পরিবারের দিকে তাকিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনই খুব বেশি সেক্রিফাইস করতে পারেন তখন। প্রেম করে বিয়ের পর ব্যাপারটা এমন থাকেনা।
.
তারপর তাকে দাওয়াত দেই দ্বীনের। বলি, জীবনটা যে কত সুন্দর হতে পারে সেটা একবার দ্বীনে প্রবেশ করে দেখ। তখন আফসোস হবে কেন আরও আগেই এখানে চলে আসলাম না এই ভেবে।
শুরুতেই ‘প্রেম করলে তো এমন হবেই’ বা ‘কইছিলাম না?’ টাইপের কথা ব্যবহার করলে আপনি সেই মানুষটাকে আরো বেশি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে দিলেন।
.
পৃথিবীতে এমন কোন যোগ্য ব্যক্তি নেই যে আমার আত্মহত্যা ডিযার্ভ করে, আমার আত্মার ওপর হক রাখে। কারণ আমার এই আত্মার মালিক দুনিয়ার কেউ না - আল্লাহ সুবহান ওয়া তাআলা। আত্মহত্যাটা উনিই ডিযার্ভ করেন কারণ তিনিই একমাত্র আমার আত্মার হকদার। অথচ তিনি জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছাড়া আত্মত্যাগকে নিষিদ্ধ করেছেন আর বাতলে দিয়েছেন তার স্মরণের মধ্যে যেন নিজের আত্মাকে নিয়োজিত রাখি। আমার তো তবে কোন সুযোগ নেই তাঁর হক অন্যের জন্য নষ্ট করার? দুদিনের পরিচয় একটা মেয়ের চেয়ে অনেক বড় কিছু আছে আমার কাছে – আমার বাবা-মা, তাদের মুখের হাসি। তাঁদের কথা না ভেবে একটা মেয়ের জন্য নিজের জীবন দিয়ে ফেললাম, এমন সন্তান আমি কীভাবে হলাম? খোঁড়া-কানা-নুলো সবারই বিয়ে হয়। একদিন আমারও বিয়ে হবে, আমার বাবা-মা আমার জন্যে সবচেয়ে ভালো মেয়েটাকেই খুঁজে নিয়ে আসবেন, এই বিশ্বাস রাখি।
.
ছোটভাইটার জন্য একটু খারাপ লাগছে। এই কারনে খারাপ লাগছেনা যে তার সাথে বিট্রে করা হয়েছে আর এতে সে আত্মহত্যা করেছে। খারাপ লাগছে খুবই তুচ্ছ একটা কারনে সে আল্লাহর অবাধ্য হল। কখনো জানতে পারলে তার পাশে বসে তাকে কিছু পরামর্শ দিতে পারতাম। আল্লাহ সুবহানওয়া তাআলা যেভাবে লাইফ লিড করতে বলেছে, সেভাবে লাইফটা একবার লিড করেই দেখোনা, কত শান্তি পাওয়া যায়। দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে একটাবার বলেই দেখ, ‘আল্লাহ, আমার বিয়ের ঘটকটা তুমিই হয়ে যাও, আমার জন্য এমন জীবনসঙ্গিনীর ব্যবস্থা করে দাও যাকে দেখলে আমি আমার জীবনের সমস্ত দুঃখ ভুলে যাব।’ তোমার দায়িত্ব শেষ। কোন দুশ্চিন্তা করার সুযোগ একেবারেই নেই।
.
কিন্তু সেই সুযোগটাই পেলাম না।
.
বিভিন্ন ঠুনকো কারনে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত তরুণ সমাজকে আত্মহত্যা থেকে দূরে সরানোর জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে। উলামাদের এই ব্যাপারটাকে ফোকাস করে নসিহা করা অনেক দরকার এই মুহূর্তে। আমি আজ পর্যন্ত যে সব ম্যাটারিয়ালস পেয়েছি উলামাদের সেগুলোর মধ্যে ‘আত্মহত্যার পরিণাম’ টাইপের লেখগুলোই বেশি। আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে প্রেমিকাকে নিজের ইলাহ বানিয়ে নেয়া একটা তরুণ কিন্তু আত্মহত্যার পরিণাম নিয়ে থোরাই কেয়ার করবে। ভয়ভীতির এই অ্যাপ্রোচে তাদেরকে থামানো যাবেনা। যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার সেটা ছিল Inner peace, আত্মিক শান্তি। প্রেমিকা চলে গেছে বা জিপিএ ফাইভ পাইনি এটা আত্মহত্যা করার মূল কারণ নয় আসলে। আসল কারণটা হল আমার মন অশান্ত হয়ে গিয়েছে, আমি কোনভাবেই শান্তি পাচ্ছিনা কিছুতে। এই জীবন থেকে মুক্তি নিয়ে চলে গেলে আর কখনো ভালো-খারাপের অনুভূতি আমাকে স্পর্শ করবে না – এই চিন্তা থেকেই মানুষ আত্মহত্যা করে ফেলে। আত্মিক শান্তি রিস্টোর করাটাই একমাত্র পথ তাদেরকে থামানোর।
.
আল্লাহ সুবহান ওয়া তাআলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের পথে চলার তৌফিক যেন দেন। আমীন।
কথা বলছি গণিত ডিপার্ট্মেন্টে পড়া এক ছোটভাইকে নিয়ে। ঈদের দিন গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে সে। কলেজ লাইফে তার ‘রিলেশন’ হয় একটা মেয়ের সাথে। মেয়েটা এখন ডিএমসিতে পড়ে।রিলেশন ভেঙ্গে মেয়েটা আরেক ছেলের সাথে চলে যায় কিছুদিন আগে।
.
গতবছর বসুন্ধরা সিটিতে সেলফোন কিনতে গিয়ে এক বন্ধু বলে, ‘উপরে ফুড কোর্ট আছেনা? কদিন আগে ওখান থেকে নিচে লাফ মেরে এক ছেলে আত্মহত্যা করে।’
.
কিছুদিন পর জানতে পারি, ছেলেটা বুয়েটের ম্যাকানিকালে পড়ত। আত্মহত্যা করার সময় তার সামনে গার্লফ্রেইন্ড ছিল। ফুডকোর্টে গার্লফ্রেইন্ডের সামনে থেকেই ছেলেটা নিচ তলায় লাফ মারে। উপস্থিত সবাই বলছিল, তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল তখন।
.
স্মৃতির পাতা উল্টাতে উল্টাতে ভাবতে লাগলাম, আজ পর্যন্ত যতগুলো সুইসাইডাল কেসের কথা শুনেছি সেগুলোর কারণ কী কী ছিল যেন?
.
খুব বেশি ভাবতে হয়নি। প্রেম আর ভাল রেযাল্ট না করতে পারা – প্রথম চিন্তায়ই এই দুটো কারণ মনেপরে যায় কারণ পত্রিকার পাতা খুললে এগুলোই চোখে আসে। খুব রেয়ার কেইসে মনের মত ঈদের জামা না পাওয়া বা কলহের জের ধরে আত্মহত্যা করার কথা শুনেছি। পরিসংখ্যানগুলো নিয়ে একটা ‘পাই চার্ট’ বানালে প্রেমঘটিত কারণটাই যে পুরো চার্টের সিংহভাগ নিয়ে ফেলবে সেটা অনুমান করতে একটুও বেগ পেতে হয়নি। আর এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আমি ভয় পেয়েছি, প্রচণ্ড ভয়। দুদিনের পরিচয় একটা ছেলে বা মেয়ে বিট্রে করার কারনে আত্মহত্যা করা লাগবে – এমন ভয়ংকর চিন্তা যে মানুষের মাথায় গিজগিজ করতে পারে এটা ভেবেই আমি ভয় পেয়েছি।
.
পৃথিবীতে এমন একটা সময় ছিল যখন আমি সেই মেয়েটাকে চিনতাম না। আমি তখনও ভালো ছিলাম। কাজেই এমন একটা সময় যদি চলে আসে যখন জোর করে আবার সেই মেয়েটাকে না চেনা লাগে, তখনও আমার ভেঙ্গে পড়ার কোন কারণ ছিলনা। কিন্তু আমি ভেঙ্গে পড়েছি আর আত্মহত্যা করেছি – এটা আমার ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা। যে মানুষটার কারনে আমি আত্মহত্যা করেছি সে যদি জানতে পারত আমার ব্যক্তিত্ব এই পর্যায়ের দুর্বল, সে আদৌ আমার সাথে সম্পর্ক করতে চাইত না। শারীরিক দুর্বলতা মুখ বুজে মেনে নিলেও মানসিক দুর্বলতা সবাই-ই মেনে নিতে পারেনা, অন্তত ঘর করার জন্য তো নয়-ই।
.
প্রেম হালাল না হারাম সেই প্রসঙ্গে এখানে কোন কথা বলছিনা কারণ যারা আত্মহত্যা করছে বা করতে চাইছে তারা সেই হালাল-হারামের স্টেইজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই এই পর্যায়ে এসেছে। রিলেশনশিপে বিট্রেড হওয়া মানুষদের চাঙ্গা করার জন্য আমি সবসময়ই যেই অ্যাপ্রোচে আগাই – বিট্রেড হবার পর প্রথমেই উচিত দু রাকাত শুক্রিয়ার সালাত আদায় করা। কারণ এই যাত্রায় ধাক্কাটা শুধু নিজের ওপর দিয়ে গিয়েছে। এমনতো হতে পারত বাবা-মায়ের অমতে মেয়েটাকে বিয়ে করে ঘরে তুলে আনার পর সে মেয়েটা ডিভোর্স দিয়ে অন্যের কাছে চলে গিয়েছে। তখন বাবা-মায়ের সামনে নিজের মুখটা দেখাবেন কী করে? বাবা-মা অন্যকে মুখ দেখাবেন কী করে? এর চেয়ে কি ভালো না যে আপদ সময় থাকতে থাকতেই বিদায় নিয়েছে? আপনি কি বুঝতে পারছেন না এটা আপনার ওপর আল্লাহর একটা রহমত ছিল? যে বিট্রে করার সে বিট্রে করবেই, রিলেশনে থাকা অবস্থায় হোক বা বিয়ের পর, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে।
.
আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে সামনাসামনি যতগুলো ডিভোর্সের কাহিনী দেখেছি সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল প্রেম করে বিয়ে করা। অ্যারেঞ্জড ম্যারিজে দুটো পরিবারের মিলন যতটা গভীর হয় লাভ ম্যারিজে তততা গভীর হয়না। অ্যারেঞ্জড ম্যারিজে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একে অন্যকে নিজেদের বাবা-মেয়ের তরফ থেকে একটা উপহার মনে করেন যেটার স্বাদ প্রেম করে বিয়ে করার পর পাওয়া যায়না। কৃতজ্ঞতাবোধ, মায়া-মমতা আর পরিবারের দিকে তাকিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনই খুব বেশি সেক্রিফাইস করতে পারেন তখন। প্রেম করে বিয়ের পর ব্যাপারটা এমন থাকেনা।
.
তারপর তাকে দাওয়াত দেই দ্বীনের। বলি, জীবনটা যে কত সুন্দর হতে পারে সেটা একবার দ্বীনে প্রবেশ করে দেখ। তখন আফসোস হবে কেন আরও আগেই এখানে চলে আসলাম না এই ভেবে।
শুরুতেই ‘প্রেম করলে তো এমন হবেই’ বা ‘কইছিলাম না?’ টাইপের কথা ব্যবহার করলে আপনি সেই মানুষটাকে আরো বেশি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে দিলেন।
.
পৃথিবীতে এমন কোন যোগ্য ব্যক্তি নেই যে আমার আত্মহত্যা ডিযার্ভ করে, আমার আত্মার ওপর হক রাখে। কারণ আমার এই আত্মার মালিক দুনিয়ার কেউ না - আল্লাহ সুবহান ওয়া তাআলা। আত্মহত্যাটা উনিই ডিযার্ভ করেন কারণ তিনিই একমাত্র আমার আত্মার হকদার। অথচ তিনি জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছাড়া আত্মত্যাগকে নিষিদ্ধ করেছেন আর বাতলে দিয়েছেন তার স্মরণের মধ্যে যেন নিজের আত্মাকে নিয়োজিত রাখি। আমার তো তবে কোন সুযোগ নেই তাঁর হক অন্যের জন্য নষ্ট করার? দুদিনের পরিচয় একটা মেয়ের চেয়ে অনেক বড় কিছু আছে আমার কাছে – আমার বাবা-মা, তাদের মুখের হাসি। তাঁদের কথা না ভেবে একটা মেয়ের জন্য নিজের জীবন দিয়ে ফেললাম, এমন সন্তান আমি কীভাবে হলাম? খোঁড়া-কানা-নুলো সবারই বিয়ে হয়। একদিন আমারও বিয়ে হবে, আমার বাবা-মা আমার জন্যে সবচেয়ে ভালো মেয়েটাকেই খুঁজে নিয়ে আসবেন, এই বিশ্বাস রাখি।
.
ছোটভাইটার জন্য একটু খারাপ লাগছে। এই কারনে খারাপ লাগছেনা যে তার সাথে বিট্রে করা হয়েছে আর এতে সে আত্মহত্যা করেছে। খারাপ লাগছে খুবই তুচ্ছ একটা কারনে সে আল্লাহর অবাধ্য হল। কখনো জানতে পারলে তার পাশে বসে তাকে কিছু পরামর্শ দিতে পারতাম। আল্লাহ সুবহানওয়া তাআলা যেভাবে লাইফ লিড করতে বলেছে, সেভাবে লাইফটা একবার লিড করেই দেখোনা, কত শান্তি পাওয়া যায়। দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে একটাবার বলেই দেখ, ‘আল্লাহ, আমার বিয়ের ঘটকটা তুমিই হয়ে যাও, আমার জন্য এমন জীবনসঙ্গিনীর ব্যবস্থা করে দাও যাকে দেখলে আমি আমার জীবনের সমস্ত দুঃখ ভুলে যাব।’ তোমার দায়িত্ব শেষ। কোন দুশ্চিন্তা করার সুযোগ একেবারেই নেই।
.
কিন্তু সেই সুযোগটাই পেলাম না।
.
বিভিন্ন ঠুনকো কারনে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত তরুণ সমাজকে আত্মহত্যা থেকে দূরে সরানোর জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে। উলামাদের এই ব্যাপারটাকে ফোকাস করে নসিহা করা অনেক দরকার এই মুহূর্তে। আমি আজ পর্যন্ত যে সব ম্যাটারিয়ালস পেয়েছি উলামাদের সেগুলোর মধ্যে ‘আত্মহত্যার পরিণাম’ টাইপের লেখগুলোই বেশি। আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে প্রেমিকাকে নিজের ইলাহ বানিয়ে নেয়া একটা তরুণ কিন্তু আত্মহত্যার পরিণাম নিয়ে থোরাই কেয়ার করবে। ভয়ভীতির এই অ্যাপ্রোচে তাদেরকে থামানো যাবেনা। যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার সেটা ছিল Inner peace, আত্মিক শান্তি। প্রেমিকা চলে গেছে বা জিপিএ ফাইভ পাইনি এটা আত্মহত্যা করার মূল কারণ নয় আসলে। আসল কারণটা হল আমার মন অশান্ত হয়ে গিয়েছে, আমি কোনভাবেই শান্তি পাচ্ছিনা কিছুতে। এই জীবন থেকে মুক্তি নিয়ে চলে গেলে আর কখনো ভালো-খারাপের অনুভূতি আমাকে স্পর্শ করবে না – এই চিন্তা থেকেই মানুষ আত্মহত্যা করে ফেলে। আত্মিক শান্তি রিস্টোর করাটাই একমাত্র পথ তাদেরকে থামানোর।
.
আল্লাহ সুবহান ওয়া তাআলা আমাদের সবাইকে দ্বীনের পথে চলার তৌফিক যেন দেন। আমীন।
No comments:
Post a Comment