Saturday, June 6, 2015

প্রথম ভুল যা প্র্যাক্টিসিং ভাইয়-বোনেরা করেন

ইসলাম প্র্যাক্টিস শুরু করার সাথে সাথে কিছু প্র্যাক্টিসিং ভাই-বোনেরা প্রথমেই যে কাজটা করে থাকেন সেটা হলো নিজের ফ্যামিলির প্রতি বিষোদগার। তাঁদের আপত্তিটা এমন – বাবা-মায়েদের চাপে তাঁরা ঠিক মত ইসলাম পালন করতে পারেনা, বাবা-মা যেন সমস্ত ‘নষ্টের’ মূল।
.
.
‘আপত্তিটা’ শুধু আপত্তির জায়গায় থাকলে একটা কথা ছিল। কিন্তু এই আপত্তিটা যখন ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রাষ্ট্র করে দেয়া হয় তখন কিছু কথা না বলে থাকা যায়না।
.
প্রথম কথা, অত্যন্ত ভালোবেসে আল্লাহ সুবহান ওয়া তা’আলা আপনাকে দ্বীনে ঢোকার সুযোগ করে দিয়েছে সে জন্য আলহামদুলিল্লাহ।
.
দ্বিতীয় কথা, দ্বীনকে প্রাথমিকভাবে বোঝার জন্য যে রিসোর্সগুলো আপনি পেয়েছিলেন সেগুলোর সিংহভাগই ইন্টারনেটের এই যুগে অনলাইন থেকে পাওয়া। সেগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ঘারানার বিভিন্ন উলামাদের লেকচার ছিল, ভিডিও ছিল, কিতাব ছিল, ছিল ফতওয়ার অথেনটিক নানান সাইট। হয়ত করেছেন অনলাইনে ক্লাস। এই সব চষেই হয়ত আপনি আজ দ্বীনের মধ্যে দাখিল হয়েছেন।
.
কিন্তু যেই বাবা-মায়েদের প্রতি আপনার এই ক্ষোভ তাঁদের কিন্তু সুযোগ হয়নি এই রিসোর্সগুলোর সান্নিধ্য পাওয়ার। বেহেশতি জেওর, মুকসুদুল মুমিনিন, নেয়ামুল কুরআনের কথা বাদ দিলে আমাদের মত বয়েসে তাঁদের ছিলনা ইল্ম অর্জনের তেমন সুব্যবস্থা। ফলে তাঁদের অনেকের কাছে ইসলামের মানেটা আজও শুধু নামায আর রোজার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এই কারনেই আপনি দাড়ি রাখলেন, কেন এত তাড়াতাড়ি রাখলেন; সুদী ব্যাংকের চাকুরী ছেড়ে দিলেন, কেন করলেন এই কাজ ইত্যাদি ব্যাপারগুলো তাঁরা বুঝতে পারেনা। তাঁদের সাথে আমাদের জেনারেশন গ্যাপের কারনে আমি-আপনি আজ যে পথে চলি, যেভাবে চিন্তা করি সেভাবে তাঁরা করেন না। আমরা আজ ভার্চুয়াল জগতের সাথে খুব বেশি অ্যাটাচড। কটা বাবা-মাকে আপনি দেখেছেন সংসারের কাজকর্ম ফেলে পিসির সামনে বসে রিসোর্স ম্যাটারিয়ালগুলো নাড়াচাড়া করতে?
.
কাজেই, ‘আমি ইসলাম মেনে চলি কিন্তু বাবা-মা মানে না’ – এই আত্মতুষ্টির জোশের বসে বাবা-মাকে সবার সামনে ছোট না করে আপনার উচিত নিভৃতে তাঁদের নাসিহা করা। অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাঁদের বোঝাবেন দাড়ি রাখার গুরুত্ব, হালাল-হারাম বাছবিচার করে জীবন চালানোর কেন দরকার ইত্যাদি ইত্যাদি। পিসিতে সফটকপি পড়ে ভাল লাগা বইটার হার্ড কপি কিনে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিন। মায়ের কাজ শেষ হয়ে গেলে পিসিতে পছন্দনীয় কোন শাইখের লেকচার ছেড়ে তাঁকে সামনে বসিয়ে দিন। বাবার মোবাইলে mp3 লোড করে দিন। বিশ্বাস করুন, আপনার খারাপ তাঁরা কখনোই চায়না। শুধু সমস্যাটা হচ্ছে, তাঁরা যেটা চাইছে সেটা যে আপনার জন্য ভাল না বরং খারাপ – এই ব্যাপারটা তাঁরা বুঝতে পারেনি।
.
.
এই ব্যাপারে আমি নিজের কথা বলি। আমি যেই মেজর আর মাইনর নিয়ে পড়াশোনা করেছি তাতে রিবা বেসড প্রতিষ্ঠানে আমার জব করার কথা। কিন্তু রক্তে সুদের ছিটেফোঁটাও থাকবেনা - আমার এই firm determination-এর কারনে আমি কখনো রিবা বেসড প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কথা চিন্তাও করতে পারিনা। এই ব্যাপারটা নিয়ে আব্বু-আম্মুর সাথে অনেক ডিস্কাশন হয়েছে অতীতে। তাঁদের ইচ্ছে থাকলেও আমি রাজি ছিলাম না। কেন রাজি নই সেটাও তাঁদেরকে খুলে বুঝিয়েছি। এবং বোঝাতে পেরেছিও আলহামদুলিল্লাহ। (আল্লাহ যেন আমাকে আমরণ হারাম থেকে দূরে রাখেন, আমীন।)
.
.
ইসলাম প্র্যাক্টিস করতে গিয়ে আপনিও যদি বলেন ‘আমার বাবা-মা আমার জন্য সমস্যা’, তবে আপনার সাথে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির TVC-এর সেই মেয়েটার আর পার্থক্য রইল কোথায় যে বলে ‘আমার ক্যারিয়ার গঠনে আমার বাবা-মা সমস্যা’? (অ্যাডটা খুব সম্ভবত ফেয়ার অ্যান্ড লাভলিরই)
.
দ্বীনের পথটা ফুলে ফুলে ছেয়ে যাওয়া নয় বরং কাঁটা দিয়েই বিছানো। পরীক্ষা যে কোন দিক দিয়েই আসতে পারে – ফ্যামিলি, প্রতিবেশি আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র কিংবা দেশ। সবাই দ্বীনের প্রতি সাপোর্টিভ থাকলে আপনি পরীক্ষাটা দিবেন কোন দিক দিয়ে?
.
আল্লাহু আলাম।

No comments:

Post a Comment