Sunday, January 11, 2015

সোজা ভাষায় ইকোনমিক্স - 3

আলোচনার বিষয়ঃ Inflation (মুদ্রাস্ফীতি)
----------------------------------

হাচরে-পাঁচরে খুঁজে ৪০ টাকা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। আপনার বাড়ি থেকে ভার্সিটিতে যেতে ন্যায্য রিকশা ভাড়া ২০ টাকা; যেতে-ফিরে আসতে মোট ৪০ টাকা। রিকশাওয়ালা আপনার কাছে ২০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা চাইতে পারে, ৩০ টাকাও চাইতে পারে। কিন্তু আপনি ২০ টাকার বেশি দিয়ে যাবেনই না কারন আপনার কাছে আছেই ন্যায্য ভাড়া পরিমান ৪০ টাকা। আপনি দামাদামি করে ২০ টাকাতেই ভাড়া সেট করবেন। 

এবার একটু অন্যদিকে তাকাই।

টিউশন থেকে স্যালারি পেলেন ৫০০০ টাকা। পকেটে সেটা নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য রিকশা নিবেন। রিকশার ন্যায্য ভাড়া ২০ টাকা। কিন্তু রিকশাওয়ালা ভাড়া চাইল ২৫ টাকা। আপনি দামদামি করলেন না, আপনার দামাদামি করতে মন চাইছেই না আসলে কারন আপনার কাছে ভাড়ার প্রয়োজনের চেয়ে অনেক টাকা আছে। আপনি করলেন কি, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা ঢেলে দিলেন রিকশা ভাড়ার পিছনে।

মুদ্রাস্ফীতি শুরু হয় এভাবেই। খুব সহজ করে কাল্পনিক একটা উদাহরণ দিয়ে পুরো ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য চেষ্টা করলাম।


একটা দেশে যেই পরিমান উৎপাদন আছে, পণ্যদ্রব্য আছে, সেই দেশের মানুষের কাছে যখন সেগুলোর চেয়ে বেশি পরিমান অর্থ থাকে, তখনই অর্থনীতিতে শুরু হয়ে যায় মুদ্রাস্ফীতি। সোজা কথায়, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমান মানি সাপ্লাই থাকলে মুদ্রাস্ফীতি শুরু হয়। এই ধরনের মুদ্রাস্ফীতিকে বলা হয় ‘ডিমান্ড পুল ইনফ্লেশান’ (Causes when too much money is chasing too few goods)।

এখন মুদ্রাস্ফীতির সংজ্ঞাটা পরিষ্কার করি।

কোন একটা পন্যের দাম বেড়ে যাওয়া মানেই কি মুদ্রাস্ফীতি?

এর উত্তর – না।

মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে, a gradual rise in price level। এখানে ‘Gradual’ কথাটা অনেক গুরুত্বপুর্ন। দেশের সামগ্রিক প্রাইস লেভেল যদি একটা ‘দীর্ঘ সময়ের জন্য’ বাড়তেই থাকে বাড়তেই থাকে, তবে এই ধরনের মূল্য বৃদ্ধিকেই আমরা  বলে থাকব মুদ্রাস্ফীতি।

১৪ই ফেব্রুয়ারী হুট করেই গোলাপ ফুলের দাম বেড়ে যায়, আবার ১৪ই এপ্রিলে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছের দাম হয়ে যায় আকাশচুম্বী -  এগুলো মুদ্রাস্ফীতির জন্য নয়। এই দিনগুলোতে মূল্যবৃদ্ধি হয়ে থাকে ডিমান্ড-সাপ্লাই থিওরির কারনে (সাপ্লাই সীমিত তবে ডিমান্ড বেশি – এমন ক্ষেত্রে জিনিষের দাম বেড়ে যায়। এই থিওরি গুলো নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করবো  ইন-শা-আল্লাহ্‌)।  দুদিন বাদেই দাম আগের মত হয়ে যায়।

মুদ্রাস্ফীতিকে অন্য কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়?

টাকার দাম কমে যাওয়াই মুদ্রাস্ফীতি। প্রাইস লেভেল বেড়ে যাওয়া, আর টাকার দাম কমে যাওয়া – দুটোর মানেই এক। কারন টাকার দাম কমে গেছে বলেই বেশি টাকা দিয়ে একই জিনিষ কিনতে হচ্ছে আপনাকে। এমন না যে বেশি টাকা দিয়ে বেশি জিনিষ পাচ্ছেন।

টাকার দাম কেন কমে যায়?

কমবে না কেন? কারন আগেই বলেছি টাকার সরবরাহ চাহিদার তুলনায় বেশি থাকলে মুদ্রাস্ফীতি হয়। আর চাহিদার তুলনায় যেই জিনিষেরই সবরাহ বেশি থাকে, সেটারই দাম কমে যায় (ডিমান্ড-সাপ্লাই থিওরিতে আসবে ব্যাপারটা)। আপনার সম্মান পাওয়ার জন্য যে যতটা যোগ্য, আপনি তাকে তার চেয়ে বেশি সম্মান দিলে আপনার সম্মানের দামও তার কাছে কমে যাবে! :)

মুদ্রাস্ফীতি ভাল না খারাপ?

এক কথায় কোন উত্তর দেয়া যাবেনা। অবাক হলেও সত্য, a little inflation is good for  economy! একটা মাত্রার বাইরে গেলে মুদ্রাস্ফীতি অনেক খারাপ পরিনাম ডেকে আনে অর্থনীতিতে, আবার একটা নির্দিষ্ট  মাত্রায় মুদ্রাস্ফীতি রাখার জন্য খোদ সরকার নিজেই উঠেপড়ে লেগে যায়। কোন দেশের সরকারই যিরো ইনফ্লেশান টার্গেট করেনা। কেন করেনা, মুদ্রাস্ফীতি কেন খারাপ, কেন ভাল, কেন সরকার চায় দেশে মুদ্রাস্ফীতি থাকুক, কীভাবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এগুলোর উত্তর আজ আর দিবনা। অপেক্ষায় থাকুন! :) 
----------------------

No comments:

Post a Comment