প্রশ্নঃ আমি একটা দেশের এক সরকারি ব্যাংকের এমন এক ডিপার্টমেন্টে কাজ করি যেটা সুদের সাথে সরাসরি যুক্ত নয়। কিন্তু সেন্ট্রাল ব্যাংক সুদ নিয়ে কাজ করে আর আমার ব্যাংকও সেন্ট্রাল ব্যাংকের সাথে সুদী লেনদেনে জড়িত। এমন ব্যাংকে কাজ করার হুকুম ইসলামে কী? আশা করি আপনি আমাকে পরামর্শ দিবেন।
উত্তরঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে।
এই ব্যাংকে আপনার কাজ করা হারাম, যদিও আপনি এমন এক ডিপার্টমেন্টে কাজ করেন যেই ডিপার্টমেন্ট সুদযুক্ত লেনদেনের সাথে জড়িত নয়।
যে ব্যাপারটা বোঝার বিষয় তা হল, দেশের সবগুলো ব্যাংকের মধ্যে সেন্ট্রাল ব্যাংক হচ্ছে প্রধান ব্যাংক। কোন ব্যাংকের যে কোন ডিপার্টমেন্টে কাজ করা প্রকারন্তে সুদযুক্ত লেনদেনে জড়িত এমন সব ডিপার্টমেন্টকে সহায়তা করা। কারন সবগুলো ডিপার্টমেন্ট নিয়েই একটা ব্যাংক; এক ডিপার্টমেন্টের কাজ অবশ্যই অন্যান্য ডিপার্টমেন্টগুলোর কাজে তরান্বিত করে। আর সবগুলো ব্যাংকই সেন্ট্রাল ব্যাংকের সাথে সংযুক্ত; আল্টিমেইটলি এরা সবাই সুদের কাজ করে। এর অর্থ, সুদের সাথে সরাসরি যুক্ত নয় আপনার এমন ডিপার্টমেন্টও সুদী লেনদেনের সাথে অন্যদিক দিয়ে জড়িত।
উলামাগন যেখানে বলেছেন যে সুদের কারবার করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর দারোয়ান বা গাড়িচালক হিসেবেও কাজ করা হারাম, সেখানে একজন ক্লার্ক বা স্টাফ হিসেবে কাজ করা যে আরও আগে হারাম, সেটা তো বলাই বাহুল্য।
শাইখ ইবনে উসাইমীন (রহঃ) বলেন, “সুদের কারবারে জড়িত এমন কোন প্রতিষ্ঠানে একজন মুসলিম ব্যক্তি দারোয়ান বা গাড়িচালক হিসবেও কাজ করতে পারবেনা। কারন সুদভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অর্থ কোন ব্যাক্তি সেই প্রতিষ্ঠানের ‘জন্য’ বা ‘হয়ে’ কাজ করছে। এর মানে, সে সুদী কাজগুলোকে বৈধতা দিয়েছে। কারন একজন মানুষ কোন একটা কাজকে অবৈধ মনে করলে, অনুমোদন না দিলে তার সেই কাজটা সমর্থন করার কথা নয়, সেই কাজটা করারও কথা নয়। কাজেই সুদী প্রতিষ্ঠানে কোন ব্যক্তির কাজ করার অর্থ হল সে কাজগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে এবং বৈধ মনে করছে। আর ইসলামে হারাম এমন যে কোন জিনিষকে কেউ সমর্থন করলে সে গুনাহর ভাগীদার হবে।
কিন্তু ব্যাপারটা যদি এমন হয় যে লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ, লিখন, পাঠানো, ডিপোজিট নেয়া, লোন দেয়া ইত্যাদির সাথে সেই ব্যক্তি সরাসরি জড়িত, তাহলে সন্দেহাতীত ভাবে সে মারাত্বক হারাম কাজের সাথে জড়িত। কারন সহীহ সনদে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) এবং জাবির (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্নিত হাদিস থেকে এটা প্রমানিত যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূদখোর, সূদদাতা, সূদের সাক্ষীদ্বয় এবং সূদের হিসাব রক্ষক বা দলীল লেখককে অভিসম্পাত করেছেন। তিনি বলেনঃ এরা সবাই সমান।”
[মুসলিম ১৫৯৭, তিরমিযী ১২০৬, আবূ দাউদ ৩৩৩৩, আহমাদ ৩৭২৯, ৩৭৯৯, ৩৮৭১, ৪০৭৯, ৪২৭১, ৪৩১৫, ৪৩৮৯, ৪৪১৪, দারেমী ২৫৩৫]
-ফতওয়া ইসলামিয়া ২/৪০১
উলামাদের স্থায়ী কমিটির কাছে একবার এক ব্যাক্তির কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যিনি এক সুদী ব্যাংকের নাইট গার্ড; ব্যাংকের সুদী লেনদেনের সাথে যার কোন যোগাযোগ নেই। সে কি ওই ব্যাংকে কাজ করতে পারবে না ছেড়ে দিবে?
উত্তরে তাঁরা বলেনঃ
একজন মুসলিমের পক্ষে কোন সুদী ব্যাংকের নাইট গার্ড হিসেবেও কাজ করা বৈধ নয়। সুদী ব্যাংকের নাইট গার্ড হিসেবে হলেও তার কাজ করার অর্থ দাঁড়ায় সে পাপ আর সীমালঙ্ঘনকারী কাজে অন্যদের সহায়তা করছে, যেটা আল্লাহ কুরআনে নিষিদ্ধ করেছেনঃ
“...পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা...”
[সূরা আল মাইয়েদা, ৫:২]
আর বেশিরভাগ ব্যাংকই সুদের কারবারের সাথে জড়িত। কাজেই আপনাকে জীবিকা অর্জনের জন্য এই হারাম কাজ বাদ দিয়ে অন্য কোন এক হালাল মাধ্যমেকে খুঁজে নিতে হবে।
সকল শক্তির একমাত্র উৎস আল্লাহ সুবহান ওয়া তায়ালা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার আর সাহাবাদের উপর আল্লাহ রহমত বর্ষন করুক।
-ফতওয়া ইসলামিয়া, ২/৪০১, ৪০২
নিশ্চয়ই আল্লাহ যে কোন ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন।
উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ।
[মূল ফতওয়ার লিঙ্কঃ http://islamqa.info/en/21113]
No comments:
Post a Comment