Wednesday, January 28, 2015

পৃথিবীর সেরা আযান

মরুভূমির মধ্যে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেলে অনুভূতিটা কেমন হয় জানা ছিলনা। আনন্দের সেই অনুভূতিটা আজ উপলব্ধি করতে পারছি কিছুটা।

স্কুলে পড়ার সময় আমার একটা নেশা হয়ে গিয়েছিল বিভিন্ন সুরের আযান রপ্ত করা আর সেগুলো সারাদিন ঘরের মধ্যে দেয়া। আমার অবস্থা দেখে বাড়ির মানুষগুলো বলত, ওকে ধরে মুয়াযযিনের চাকুরীটা দিয়ে দে।

আমি নামায পড়তাম বিভিন্ন এলাকায়। বিভিন্ন এলায় যাওয়ার কারণটাই ছিল বিভিন্ন মুয়াযযনিনের দেয়া আযান শোনা। খুব বেশি ভাল লাগলে একবার শুনেই রপ্ত করে ফেলতাম সেটা।

এভাবে নিজ এলাকা, পাশের এলাকা, নানী বাড়ি, দাদি বাড়ি সহ প্রায় ৮/৯ ধরনের ভিন্ন সুরের আযান দিতে পারতাম।

কিন্তু পারতাম না আমার শোনা পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা আযানটা। এমনই এক আজান ছিল, যতবার শুনতাম, চোখ ফেটে শুধু শুধুই কান্না আসত।

বিটিভিতে মাগরিব আর এশার সালাতের সময় এই আজানটা দিত। তেমন ভাবে টিভি না দেখা হলেও এই দুই সময়েই শুধু টিভির পর্দা খুলে বসে থাকতাম আযানটা শোনার জন্য।

আমার ধারনা ছিল আযানটা মক্কার কোন মুয়াযযিনের। আযানে শব্দগুলোর উচ্চারন, টান, দম রাখা...ইত্যাদি আরব ছাড়া অনারব মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় আমি মনে করতাম।

অনেক আফসোস হত, ইশ...যদি রেকর্ড করে রাখতে পারতাম! তখন তো মোবাইল ফোনের চল ছিলনা তেমন। আর থাকলেই কী, রেকর্ড করার মত ফোন তো আর ছিলনা।

একটা সময় বড় হতে লাগলাম, গ্রামের স্কুল শেষে ঢাকার স্কুলে ভর্তি হলাম, কলেজে ভর্তি হলাম...টিভি থেকে যোজন যোজন দূরে গেলাম। ফলে দীর্ঘদিন ধরে শোনা হয়নি আযানটা।

কিন্তু তারপরেও কখনো ভুলিনি সেই আযান টাকে। প্রায় রাতের পর রাত বিছানায় ভেবেছি। মন চাইলে নিজেই দেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু হত না আমার।

মনের মধ্যে একটা চাহাত ছিল, আমি যদি একবার সেই মুয়াযযিনের সাথে সাক্ষাৎকরার মত সৌভাগ্যবান হতাম! আল্লাহ আমাকে হাজ্ব করার তৌফিক দিলে আমি মক্কায় গিয়ে অবশ্যই মুয়াযযিনকে খুঁজে বের করে দেখা করতাম। তাঁর সাথে হাতে হাত মেলাতাম, বুকে বুক মেলাতাম।

একটা সময় মাল্টিমিডিয়া ফোন আসল, ২০০৫ এর দিকে বাংলাদেশে মোবাইলে নেট আসল। নেটে নবিসের মত খুঁজতাম। কিন্তু পেতাম না। বিটিভির ওয়েবসাইটেও হানা দিয়েছিলাম। পেলাম না।

আত্মীয়ের মধ্যে যারাই মক্কায় যেত, সবার মোবাইলেই আযানটা দিয়ে বলতাম – একটু খুঁজে দেখবেন তো উনাকে পাওয়া যায় কিনা।

না, কেউ পায়নি।

আজ প্রায় ১০ বছর পর ২০১৫ সাল। এখন ব্রডব্যান্ড লাইনের নেট ব্যবহার করি।

হঠাৎ করেই ছোটবেলার অনুভূতিটা মনের মধ্যে আবার ফিরে এল। যতরকমের কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করা সম্ভব সবই করলাম। ইউটিউবের প্রায় সব আযান শুনে ফেললাম। কিন্তু পেলাম না।
শেষে আল্লাহ্‌কে মন থেকে একবার ডেকে BTV AZAN লিখে এন্টারে ক্লিক করে দিলাম।

আলহামদুলিল্লাহ্‌!

পেলাম অনেক শেষে ইউটিউবেই।

এতবছর পর আযান টা শুনে আবার চোখ ফেটে পানি চলে আসলো। আল্লাহ্‌কে শুক্রিয়া জানালাম।

এবার কমেন্ট বক্সের কমেন্ট গুলো দেখে চোখ একদম ছানাবড়া।

আযানটা আসলে মক্কার কোন মুয়াযযিনের নয় বরং বাংলাদেশের জাতীয় ক্বারী মুহাম্মাদ উবাইদুয়াল্লাহ সাহেবের। তিনি বায়তুল মুকারম মসজিদের খতিব ছিলেন। কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন।

আযানের লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=gq3Tss5GPCY 

1 comment:

  1. খ্যাতিমান ক্বারী, চকবাজার শাহী মসজিদের সাবেক খতীব ক্বারী মুহাম্মদ উবায়দুল্লাহ।
    গত ২০শে ডিসেম্বর,২০১৬ইং (২০/১২/২০১৬ইং) মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কামরাঙ্গিরচরের বাসায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নানিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
    তিনি দীর্ঘ দিন ধরে নানা রোগে ভুগছিলেন। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা গ্রামে জন্ম এই মণীষীর। জামিআ কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসায় থেকে ১৯৬২ সালে দাওরায়ে হাদিস শেষ করেন। শিক্ষা সমাপনী শেষে লালবাগ মাদরাসায় শিক্ষকতা দিয়ে জীবন শুরু করেন। আর ঐ বছরেই রেডিওতে প্রথম মধুর সুরের ঝংকার তোলেন। তার খ্যাতি ছড়াতে থাকে সর্বত্র। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ বেতারে কুরআনের প্রথম যে সুর বেজে উঠেছিলো তাও এই মণীষীর কণ্ঠেই। পার্লামেন্টের শুরুর অধিবেশন থেকে নবম পার্লামেন্ট পর্যন্ত জাতীয় সংসদকেও কুরআনের তিলাওয়াতে বিমোহিত করে রেখেছিলেন তিনি। এদেশে তার অবদান এমনই যে তা ভোলার নয়।
    ২০০০ সালে কারী উবায়দুল্লাহ প্রথম হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থও হয়ে উঠেন। তারপর ২০০৬ সালে ঢাকার বাইরে এক মাহফিলে যাওয়ার পথে ব্রেন স্ট্রোকের শিকার হন। এ সময় চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। পরে কোলকাতায় চিকিৎসা দেওয়া হলে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেন।
    ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনবার ব্রেনস্ট্রোকের শিকার হন। ২০১২ তে সর্বশেষ ব্রেনস্ট্রোকের শিকার হয়ে রাজধানীর কামরাঙ্গীর চড়ের বাসায় অসুস্থ অবস্থায় বিছানাতেই ছিলেন মৃত্যু পর্যন্ত।

    ReplyDelete