Thursday, February 5, 2015

‘বাবা তুমি আমাকে কতখানি ভালোবাসো?’

মেঝেতে হাঁড়িপাতিল ছড়িয়ে সংসার গড়ে খেলছিল পুতুল। আমি শুয়ে রয়েছিলাম বিছানায়। সিলিঙের দিকে সাতপাঁচ ভাবছিলাম।

হঠাৎ খেলা থামিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ও বলে, ‘বাবা তুমি আমাকে কতখানি ভালোবাসো?’
প্রায়ই আমাকে এই প্রশ্নটা ও করে। সেটা অবশ্য কোন কথার প্রসঙ্গে। ওর ছোট্ট মন ভরা শুধু বাবার জন্য ভালবাসা। আর কিছু নেই।

কিন্তু আজ কোন প্রসঙ্গ ছাড়াই ও জিজ্ঞেস করল।

আমি বললাম, ‘কেন রে আম্মু? আমি তো তোকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

‘কতখানি?’

‘অনেক খানি। এই যে দেখ এতততততততততত বড়।’ দুই হাত প্রশস্ত করে ইয়া বড় করে দেখালাম।

‘আচ্ছা বাবা, তুমি কি কেয়ামতের সময় আমাকে চিনবেনা?’

উত্তরটা দিতে গিয়েই একদম চুপ হয়ে গেলাম।

সেদিন কোলে বসিয়ে ওকে বলছিলাম মৃত্যুর কথা, কবরের কথা, কিয়ামতের কথা, হাশরনাশর আর জান্নাত-জাহান্নামের কথা।  ভাল কাজ না করলে, পচা পচা কাজ করলে আল্লাহ অনেক অখুশি হবে, রাগ করবে। আমরা সবাই একদিন মারা যাব। মারা যাওয়ার পর আল্লাহর কাছে চলে যাব। কিয়ামতের সময় সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে – ওর হাঁড়িপাতিল, পুতুল বউ, ওর জুতো সব। আবার এরপর আমরা বেঁচে উঠবো। ওই যে আমরা পচা পচা কাজ করেছিলাম না? সেই জন্য আল্লাহ আমাদের তখন শাস্তি দিতে যাবে। তখন ওর দাদু ওর কাছে কিছু ভাল কাজ চাইবে, ও ওর নানির কাছে ভাল কাজ চাইবে, ওর আম্মু আবার ওর কাছে। কিন্তু কেউ কাউকে চিনবেনা তখন, কেউ কারও ভাল কাজ কাউকে দিবেনা ওকে তখন। তাই সবসময় ভাল কাজ করতে হবে।

কিন্তু ওর ছোট্ট মনে এই বিশ্বাসটা ছিল – আর কেউ চিনুক, ওর বাবা তো ওকে সেদিন চিনবে, ওর বাবা না ওকে কতখানি ভালোবাসে?

তাই তো? আমরা যে প্রিয় মানুষগুলোর কাছে দাবী করি আমরা তাঁদের ভালোবাসি, আসলেই কি আমাদের ভালোবাসা সেই পর্যায়ের যে হাশরের মাঠে নিজের আমলনামা থেকে কিছু সাওয়াব তাঁদের দিতে পারব?

না। কখনোই না। কেউ করবেনা এই কাজ।

উত্তর দিতে না পেরে আমার পাগলিটাকে বুকে টেনে নিলাম শুধু। মনে মনে বলছি, ‘মা আমাকে মাফ করে দিস তোকে মিথ্যে বলার কারনে’।

No comments:

Post a Comment