Friday, March 13, 2015

বেদের মুল্লুক



নাহ, এই বেদে মেয়েগুলোকে নিয়ে আর পারা যায়না। রাস্তায় চলতে গিয়ে কতবার যে তাদের দ্বারা পথরোধের শিকার হয়েছি, হেনস্তার শিকার হয়েছি, সেটা আমি জানি আর জানে আল্লাহ।

চেহারা আমার বোকাসোকা হওয়ার কারনে কীভাবে যেন তারা দূর থেকেই টের পেয়ে যায় এই আমার কাছ থেকেই খসানো যাবে কিছু টাকা। ভিড়ের মধ্যে সবাইকে ঠেলেঠুলে দল বেঁধে আমার কাছেই চলে আসে, গায়ে হাত বুলিয়ে বলতে থাকে সেই কমন এক ডায়লগ – কিসু ট্যায়া দেন আমার বিয়া।

অদ্ভুত! এদের কী সারাজীবন বিয়েই হতে থাকে? কখনোই শুনিনি এমনি এমনি কিছু টাকা চাইছে।  

আমার সমস্যাটা আবার হচ্ছে, আমি নরমের ভক্ত শক্তের যম। কোলে বাচ্চা নিয়ে মাথায় ওড়না চাপিয়ে কিশোরী মা টি যখন হাত পেতে দিয়ে বলে ভাই কিছু টাকা দেন, চোখ দুটো আমার টলমল করতে থাকে। খালি মনে হয় আমার মায়ের কথা – আল্লাহ চাইলে আমার মা-বাবাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে পারতেন, আমার জন্ম এমন ঘরে হতে পারত, আমার মাও আমাকে কোলে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করত। পঞ্চাশোর্ধ বুড়ো মানুষটি যখন বলে তার চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার, বাবার কথা তখন মনে হয়। দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি যা দেয়া সম্ভব তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বড় কোন অংকের টাকা দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহ মাঝে মধ্যে আমাকে যখন দেয়, মুখ জুড়ে হাসির যেই ছটা টা দেখতে পাইনা তাদের, তা দেখলে প্রচণ্ড মন খারাপের সময়টিতেও আপনার মন ভাল না হয়ে পারবেই না। একদিন দিয়েই দেখুন।

কিন্তু এই বেদে মেয়েগুলো কেমন রে বাবা, পরপুরুষের গা ধরে রাস্তায় পথরোধ করে একপ্রকার ছিনতাই করে?

সেদিন রাগের মাথায় একটাকে প্রায় ধমক দিয়েই বললাম, ‘এই মেয়ে, গায়ে হাত দাও কেন?’ কে শোনে কার কথা। সেই একই টোনে ঘ্যান ঘ্যান করে বলছে ওর বিয়ে, ওকে কিছু টাকা দিতে। ওয়ালেট বের করে ২০ টা টাকার নোট বাড়িয়ে দিলাম। কিন্তু সে এটা নিবেনা। ‘এত কম দিলে অইব? বিয়া করুম। ওই যে ৫০ ট্যায়ার নোট দেহা যায়। ওইডা দেন।’

‘তোমাকে এটাই দিব। নিলে নাও নাইলে রাস্তা ছাড়, গা থেকে হাত সরাও।’

‘এমন রাগ মানুষ করে নি!’, (হাতে থাকা ছোট একটা কৌটা দেখিয়ে), ‘সাপের অভিশাপ লাগব কইলাম

‘লাগুক’বলে হাঁটা শুরু করলাম।

সেই যাত্রায় বারগেইনিং পাওয়ার আমার বেশি ছিল বলে শেষতক ওই ২০ টাকা নিতেই নিমরাজী হয়। তবে গজগজ করতে করতে সাপের অভিশাপের কথাটা আমাকে মনে করিয়ে দিতে ভুলেনি তারা।

লে বাবা! নাকাল হব, ছেড়ি-বেটিরা গায়ে হাত দিবে, আমার ঘেন্না লাগবে, মেজাজ খারাপ হবে, টাকা দিব, আবার বেশি কেন দিলাম না সেই ‘অপরাধে’ সাপের অভিশাপও পাওয়া লাগবে! মগ দস্যুরা নিজদের মুল্লুক বানানোর সময় এটা কি ভাবতে পেরেছিল কখনো?

আর হ্যাঁ। ওই কৌটার মধ্যে সাপখোপ ঘোড়ার ডিম কিছুই নেই। ওটার ভেতর টাকা রাখে তারা। ভয় পাবেন না কখনো, ইন শা আল্লাহ। বই মেলায় তাদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। ঢাবির স্যার এফ রহমান হলের পাশে ফুটপাথে তাদের পাবেন। আরও পাবেন কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ডে, একটু ভর দুপুরে। এই ক’ জায়গায় রিসেন্টলি আক্রান্ত হয়েছিলাম বলে মনে আছে স্পটগুলোরাগ করার দরকার নেই আমার মতগায়ে হাত দেয় বলে মেজাজ চড়ে গিয়েছিলনইলে আমি কারও সাথেই রাগারাগি করিনা।

No comments:

Post a Comment