Saturday, September 30, 2017

আপনার সাধের ও শখের ক্যামেরাটি একটু দেখেশুনে ও বুঝে কিনুন

(গত সপ্তাহে আমার বন্ধুর আদরের একমাত্র ছেলেকে ক্যামেরা কিনে দিবে বলে আমাকে অনুরোধ করে আমি যেন সাথে থেকে একটি ক্যামেরা কিনে দিই। কারন ক্যামেরার অনেক ব্যাপার স্যাপার সে বোঝে না। বলা বাহুল্য বন্ধুর আহবান শত ব্যস্ততা থাকলেও যেতেই হবে। গেলাম বায়তুল মোকাররমে, ক্যামেরা মার্কেটে। আমরা সকল দরদাম ঠিক করে আমার শর্ত অনুযায়ী আমি একটি ছবি তুলে ক্যামেরার শাটার কাউন্ট ও বডি সিরিয়াল মিলানোর জন্য অনলাইনে চেকিং করতে গিয়ে মাথা আমার চড়কগাছ! ক্যামেরার বডির সাথে লিখা সিরিয়াল নাম্বার একেবারেই মিলছে না। আমি অবাক হয়ে গেলাম ,যেখানে সিরিয়াল নাম্বার ২ দিয়ে শুরু আর সেখানে আমাকে ৬ দিয়ে দেখাচ্ছে; রাত আর দিন। আমি বুঝতে পারলাম আসলে ক্যামেরার মাদারবোর্ড ভিতরে কোন কারনে চেঞ্জ করা হয়েছে। হতে পারে রিপেয়ার করে লাগানো হয়েছে, হতে পারে অসাধু ব্যবসায়ীরা পুরান বা খুতযুক্ত ক্যামেরা ঠিক করে অন্য কেসিং-এ ভরে দিয়েছে। সঙ্গত কারনে আমি সে দোকানের নাম বলছি না কেননা কারো ব্যবসায়িক ক্ষতি করা আমার লক্ষ্য নয়। আমার লক্ষ্য ক্রেতার সচেতনতা। কারণ অনেক কষ্টের টাকা দিয়ে আপনি একটি ক্যামেরা কিনবে আর সেটি যদি এভাবে রিপিয়ার বা ভেতরে মাদাবোর্ড পরিবর্তিত থাকে তাহলে আপনি এই ক্যামেরা টা দিয়ে ছবি তুললেও কোথাও প্রমান করতে পারবেন না এই ছবিটা আপনার ক্যামেরা দিয়েই তোলা। আরো অনেক অসুবিধায় আপনি পরতে পারেন। আপনাদের কে সতর্ক করবার জন্যই আজকে আমার এই অল্প কিছু কথা) 
----------------


চিত্রঃ ১ ( আমার নাইকন ক্যামেরার বক্স)

সবার আগে করনীয় 

আপনি আগে সিদ্ধান্ত নিন আপনি কোন ক্যামেরাটা কিনবেন। তারও আগে আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করবো, আপনি যদি একেবারেই নতুন হন বা এমেচার ফটোগ্রাফার হন তাহলে আপনি আপনার ক্যামেরা সংক্রান্ত ভিডিও বা আর্টিকেল এবং যে ক্যামেরাটা কিনতে চান, সেই ক্যামেরার রিভিউ গুগুলে সার্চ দিয়ে পড়বেন, এতে আপনার একটা ভালো আইডিয়া তৈরী হবে। আরেকটা বিষয় মনে রাখবেন, এই সমস্ত দামী গিয়ার কিনতে গিয়ে কখনোই তাড়াহুড়া করবেন না, প্রচন্ড আকাঙ্খা কাজ করে বলেই একটা লোভনীয় দাম বা অফার শুনে হুটকরে কোন দোকান থেকে কিনিতে যাবেন না, আগে তাদের সাথে আলাপ করেন, কেন তারা কমদামে ক্যামেরা বিক্রি করতে পারছে, কেন অন্যেরা পারছে না, অসৎ বিক্রেতা কিন্তু তার কথাতেই ধরা পরে যাবে। আমাদের ধর্মে আছে আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন। এটার প্রমান আমি নিজের ক্ষেত্রেই পেয়েছি।আমি আমার নাইকন ডি-৭৫০ ও ডি-৩৩০০ কিনেছি, ধীরে সুস্থে, বাজেট থাকার পরেও আমি তাড়াহুড়া করিনি বা আজকেই আমাকে ফটোগ্রাফার হয়ে যেতে হবে এমনটা মনে করিনি।আল্লাহর রহমতে আমি ১০০% নিশ্চিত যে আমি আমার মনের মত ক্যামেরাই কিনেছি। (ক্যানন ব্যবহারকারী পাঠকদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আমি নাইকন ইউজার তাই নাইকনের সিকিউরিটি মেজারগুলোই আমি তুলে ধরব, তবুও ক্যাননের ইউজার ভাইদের কাজে লাগতে পারে আমার এই উপদেশগুলি)।

মনে রাখবেন তথ্য-প্রযুক্তির এই দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় হল- youtube।
এখানে শিক্ষনীয় ভিডিও থেকে শুরু করে আপনি সব কিছুই পাবেন। কাজেই এখান থেকে আগে আপনি ফটোগ্রাফিক কিছু জ্ঞান নেওয়ার চেষ্টা করুন। কাজে লাগবে, ফটোগ্রাফির উপর সব চ্যানেল এবং ব্যক্তিগত ভিডিও যে ভাল হবে তেমন ভাবার কারন নেই। তবে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলগুলো আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে তার মধ্যে নাইকন স্কুল, এডারমা টিভি, এছাড়া ব্যক্তিগত চ্যানেল এর মধ্যে টনি নর্থরুপম্যাটগ্রেঞ্জার এর চ্যানেল আমার ভালো লাগে। অনলাইন রিভিউ সেকশনে আমি কেন রকওয়েল এর খুব ভক্ত এছাড়া রিভিউ এর ক্ষেত্রে ডিপিরিভিউ বেশ ভালো বলা যায়। 

চিত্রঃ ২ (বক্সের অন্যপাশে উপরে ডান কর্ণারে ক্যামেরার বডি ও লেন্সের সিরিয়াল স্টিকার)
ইউ-টিউবে আপনি ক্যামেরার যে মডেলটি কিনতে চান সেই মডেলের আনবক্সিং অর্থাৎ নতুন কেনা বক্স খোলার ভিডিও দেখানো হয়। সেই ভিডিওগুলি দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার কিনতে যাওয়া ক্যামেরার নির্দিষ্ট মডেলের বক্সে কি কি এক্সেসরিজ ও কাগজপত্র থাকবে। অবশ্য ভিডিওগুলো দেখার সময় ভিডিও পোস্টকারীর স্থান (দেশ) বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন কেননা নাইকন কোম্পানী অনেক সময় এলাকা ভিত্তিক কিছু কম বেশী এক্সেসরিজ বা বুকলেট দিয়ে থাকে, এবং ইংরেজী ভিডিও হলে প্রেজেন্টারের বক্তব্য থেকে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি এই ক্যামেরা কোথা থেকে ক্রয় করেছেন। সাধারনত অনলাইন শপ যেমন অ্যামাজন (amazon.com) অনেক সময় মুল বক্সের সাথে গিফট আইটেম ও দিয়ে থাকে। তবে এসমস্ত আনবক্সিং ভিডিও দেখতে দেখতে আপনার একটা ধারনা হয়ে যাবে অরিজিনাল নাইকন আউটলেটের বক্স এবং এর ভেতর কি থাকতে পারে। এই প্র্যাকটিসটা আমি শুধু নাইকন ক্যামেরা ক্রয়ের ক্ষেত্রে নয় যে কোন ইলেক্ট্রনিক গিয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রেই করে থাকি। 
 

রিফারবিশড ধারনা ও কনফিউশন

আমরা প্রায়ই বলে থাকি, গ্রে মার্কেট ( আন-অথারাইজড) এ নাকি রিফারবিশড ক্যামেরা বিক্রি করা হয়ে থাকে। আমি বলবো রিফারবিশড নয় রিপিয়ারড ক্যামেরা। দুর্ভাগ্য হলো আমরা জাতি হিসাবে কখনোই সততার পরিচয় দিতে পারিনি। বিদেশে কিন্তু রিফারবিশড ক্যামেরা দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। তবে তারা সেটা বক্সের গায়ে হাইলাইট করে লিখে দিচ্ছে Refurbished।এবং সেটা প্রচলিত নাইকনের বক্সে দেওয়া হয় না, প্লেইন ঊডেন কালার কাগজের বক্সে সাপ্লাই দেওয়া হয়। আমি নিজেও জেনে বুঝে কোম্পানীর রিফারবিশড ক্যমেরা কিনতাম যদি বাংলাদেশে তা প্রকাশ করে বিক্রি করা হতো। কেননা রিফারবিশড মানেই খারাপ এটা ভাবার কোন কারন নেই। সাধারণত সেখা যায় সে সমস্ত ক্রেতা একটি ক্যামেরা ক্রয়ের পরে কোন ত্রুটি অথবা তার অপছন্দের কারনে(অপারেটিং জটিলতা) কোম্পানীকে ফেরত দেয় একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর তখন কোম্পনী সেই ক্যামেরাটি নিজেদের ফ্যাক্টরীতে পাঠিয়ে ঠিক করে নেয় অথবা ভালো ক্যামেরার ফেরতের ক্ষেত্রে তা আবার মার্কেটিং করে তবে সততার কথা বলেছিলাম, সেই সততার কারনে তারা এটার দাম কমিয়ে এবং অন্য ধরনের বক্সে, রিফারবিশড সিল মেরে সেটা বিক্রি করে। তাই অনেক সময় রিপেয়ার করা রিফারবিশড ক্যামেরা একেবারে নতুন ক্যামেরার মতই পারফরম করে। বাংলাদেশের মার্কেটে কখনোই আমি এমনভাবে সততার সাথে রিফারবিশড ক্যামেরা বিক্রি করতে দেখিনি, বরং এরা যেটা করে এটাকে আমি বলব, রিপেয়ার করা। অর্থাৎ ত্রুটিযুক্ত ক্যামেরাকে সারাই করে নিয়ে বিক্রি ভালো বলে বিক্রি করা, যেটা চৌর্যবৃত্তির সামিল।(দুখিত কাস্টমারের স্বার্থ চিন্তা করে এই শব্দটি ব্যবহার করতে হলো) 

এবার তাহলে আসি মুল কথায়।

কিভাবে আপনি আপনার নাইকন ক্যামেরাটি কিনবেন। আপনি নাইকনের অথারাইজড ডিলার বাংলাদেশে, ফ্লোরা লিমিটেড থেকে কিনেন অথবা বাইরের কোন ক্যামেরার দোকান থেকে কিনেন সেটা কোন বিষয় নয়। আমি আপনাকে বলে যাবো আপনি নিম্নলিখিত বিষয়গুলি ফলো করবেন ও কিছু শর্ত বিক্রেতাকে দিবেন সেই শর্তগুলি মেনে বিক্রেতা আপনার কাছে বিক্রি করতে চাইলে আপনার নির্ভয়ে অরিজিনাল ক্যামেরা পাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। চিত্র নং ২ এ দেখেন আমি বক্সের গায়ে ডান কর্ণারে দুটি সিরিয়াল স্টিকার এর কথা বলেছি, এর একটি হলো ক্যামেরার গায়ের সিরিয়াল নম্বর ও অন্যটি হলো সাথে দেওয়া কিট লেন্সের সিরিয়াল নাম্বার। মনে রাখবেন শুধু বডির জন্য বক্সের গায়ে শুধু বডির একটি সিরিয়াল নাম্বার থাকবে, যদি সেই বক্সটা অনলি বডির হয়। কেননা নাইকন শুধু বডির জন্যও বক্স করে। শুধু ক্যামেরা নয়, আপনি যখন আলাদা লেন্স কিনতে যাবেন সেই ল্যান্সের গায়েও এই সিরিয়াল নাম্বার দেখে, মিলিয়ে কিনবেন। আমি আবারো বলছি যে সমস্ত দোকানে ক্যামেরা এই সিরিয়াল স্টিকার থাকবে না, সবার আগে তাদেরকে ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে বিদায় হবেন। কারন আপনি একটা বক্স খোলার সাথে সাথে যে কাজটি করবেন সেটা হলো এই সিরিয়াল স্টিকারের সাথে আপনি ক্যামেরার বডি ও লেন্সের(যদি কিট লেন্স থাকে) সিরিয়াল নাম্বার মিলিয়ে দেখবেন। এই সিরিয়াল স্টিকার নিয়েও আমার এক মজার অভিজ্ঞতা আছে। আমি যখন আমার নাইকন ডি-৭৫০ টি কিনার জন্য মার্কেটে মার্কেটে ঘুরছি, কিন্তু প্রায়ই পাই যে বক্সের গায়ে স্টিকার নাই। এরকম একবার এক লোক আমাকে জানালো- ভাই আসেন আপনার চাহিদামত সব আছে, বক্সের গায়ে স্টিকার সহ। আমি গেলাম গিয়ে দেখি আসলে স্টিকার সে বানিয়েছে বডি ও লেন্সের সিরিয়াল নাম্বার নিয়ে কম্পিউটারে বার কোড তোইরী করে অথবা ফটোকপি করে হুবহু প্রিন্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমি ফন্টের ডিফারেন্স, পাতলা কাগজ ও সেই সাথে আগের স্টিকার তুলে ফেলায় যে গাম বা কষের দাগ তৈরী হয়েছিল তার সাথে না মিলায় আমি বিক্রেতাকে চ্যালেঞ্জ করেছি, যে এটা বানানো স্টিকার।অধিকন্ত এই ক্যামেরাটি আরেকজন বিক্রেতা আমাকে দেখিয়েছিল, আমি চালাকি করে ক্যামেরা বডি দেখার সময় সিরিয়াল নাম্বারটি টুকে রেখেছিলাম, দেখলাম সেই সেট। মনে রাখবেন গ্রে মার্কেট এ কিন্তু একই মাল কাস্টমার এর ডিমান্ড অনুযায়ী বিভিন্ন বিভিন্ন দোকানে ঘোরাফেরা করে, কারন এদের সাপ্লায়ার মুলত এক কি দুইজন তাই।

 
চিত্রঃ ৩ স্টিকারের মসৃণতা ও এর আশে পাশে রাবারের বা গামের কোন ঘষাঘষি থাকবে না, এটা লক্ষ্য রাখবেন।
সাধারনত ক্যামেরার সিরিয়াল থাকে বডির নীচে, আমার ডি-৭৫০ ও এর ২৪-১২০মিমি লেন্সের গায়ের ব্যারেলের নীচ দিকে সিরিয়াল নাম্বার নিচের চিত্রে লক্ষ্য করুন। তবে অন্যান্য মডেলে ক্যামেরার অন্য জায়গাতেও এই নাম্বার লাগানো থাকতে পারে। মবে রাখবেন এটা হলো হার্ডওয়ার থেকে ভেরিফিকাশনা। এই একই সিরিয়াল নাম্বার আপনি সফটোয়ার ভেরিফিকেশান করবেন, সেটাই হলো মেইন। 

চিত্রঃ ৪ ক্যামেরার একেবারেই বটমে বা তলদেশে। সিরিয়াল নাম্বারটি চিত্র ৩ এর সাথে মিলিয়ে দেখুন।

চিত্রঃ ৫ লেন্সের ব্যারেলের গোড়ায় সিরিয়াল নাম্বারটি চিত্র ৩ এর সাথে মিলিয়ে দেখুন।
এটা হলো ফিজিক্যাল হার্ডওয়ার ভেরিফিকেশন বা সিরিয়াল নাম্বার। এবার আমরা আলোচনা করবো, এই সিরিয়াল নাম্বার কিভাবে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করা যায় সেটা নিয়ে। এই ভেরিফিকেশন টা হয় মুলত অনলাইনে। কারন আমার জানামতে এখন পর্যন্ত অফলাইন কোন সফটওয়ার আছে কিনা আমি জানি না, কারো কাছে তথ্য থাকলে কমেন্ট অথবা ইমেইলে জানিয়ে দিলে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকব। মুলত এই অনলাইন সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আমরা দুটো জিনিস জানতে পারি, সেটা হলো নাইকন ক্যামেরার শাটারকাউন্ট (Shutter Count)ও একই সাথে বডির সিরিয়াল নাম্বার টা ভেরিফাই করতে পারবো। শুনেছি নাইকনের সকল মডেলের ক্যামেরাই শাটার কাউন্ট দেয় না, এটার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। তবে এখানে আমি দুটো সাইটের কথা উল্লেখ করব। এর দুটিতেই একটু সমস্যা আমি পেয়েছি। তবে আমরা একই ছবি একই সময়ে দুটো সাইটে ভেরিফিকেশন করে নিলে এই সমস্যা থেকে সবাধান পাবো।

কিভাবে করবেন অনলাইন ভেরিফিকেশন?

সবার আগে আপনাকে বিক্রেতাকে এই শর্তে রাজী করাতে হবে যে আপনি এই অনলাইনে ভেরিফিকেশন করে নিবেন সিরিয়াল না মিললে ও শাটার কাউন্ট এ প্রথম শট না হলে নিবেন না। এমনকি এটা যদি নাইকনের অথারাইজড ডিলার ফ্লোরা হয় সেখানেও। উক্ত দোকানে হয়তো নেট সুবিধা নাও থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনার ল্যাপটপ, ট্যাব অথবা স্মার্ট মোবাইল নিয়ে যেতে পারেন যেটা দিয়ে সরাসরি ডাটা কেবল বা কার্ড রিডার এর মাধ্যমে আপনি ওয়েব সাইটে ছবিটা আপলোড করতে পারবেন। স্মার্ট ফোনের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রাকৃতির মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে ক্যামেরা এডাম্পটার আছে যেটার মধ্যে মাইক্রো এসডি কার্ড ঢুকিয়ে সরসরি ক্যামেরার মেমরি শ্লটে রেখে ছবি তুলে তা আবার স্মার্টফোনে লাগালে মেমরিকার্ডে ছবি চলে আসবে। এছাড়া আপনার ল্যাপটপ হলে একটি এসডি কার্ড(যেটা ক্যামেরায় ব্যবহার হয়) নিয়ে যেতে পারেন। কারন ল্যাপটপে বিল্টইন কার্ড রিডার থাকে। অনেক সময়ে বিক্রেতার কাছে ব্যবহৃত এসডি কার্ড থাকে সেটা নিয়েও ছবি তুলতে পারেন, তবে বিক্রেতার উপর নির্ভর না করাই ভালো। এমনকি ইন্টারনেট এর ব্যাপারেও। প্রথমে আমি যে সাইটটির স্ক্রীন শট দিচ্ছি সেটিতে আমার নাইকন ডি-৭৫০ মডেলটির একটি ছবি তুলে ভেরিফাই করলাম। মনে রাখবেন এক্ষেত্রে ক্যামেরায় জেপিইজি (আমেরিকায় বলে জেপেগ) স্মল ফরমেটে ছবি তুলে আপলোড দিবেন, এতে আপলোডে সময় লাগবে কম।
সাইটের এড্ড্রেস হল www.nikonshuttercount.com

চিত্রঃ নং ৬
উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমার ক্যামেরার মডেল ও সিরিয়াল নাম্বার ও শাটারকাউন্ট দেখাচ্ছে, অনুগ্রহ করে চিত্র ৩ এর সাথে বডির অনলাইনে দেখানো সিরিয়ালটি মিলিয়ে নিন।

এই সাইটে সমস্যা হলো সকল নাইকনের মডেল ডিটেক্ট করলেও সকল ক্যামেরার সাটার কাউন্ট দেয় না, এটা সাইটের পেজের নিচে লিখা আছে, কি কি মডেল সাপোর্ট করে। যেমন আমি আমার ডি-৩৩০০ এর ছবি আপলোড করেছি, মডেল নাম্বার ডিটেক্ট করলেও সাটার ও বডির সিরিয়াল নাম্বার দেয় নি।
এটার সমাধান হিসাবে আমরা বিকল্প আরেকটি সাইটে যাবো সেটার হোম এড্রেস হলোঃ
www.shuttercounter.com
 
এখানে একটি ছবি আপলোড করার পরে, পরে পৃষ্টার ৭ নং ছবির মত একটি ইনফো বক্স আসবে, যেখানে শুধুমাত্র শাটার কাউন্ট দেওয়া থাকবে, আর কোন তথ্য থাকবে না, তবে ছবির মুল তথ্য এক্সিফ ডাটাতে যাওয়ার জন্য একটি অনুমতি চাইতে আপনি ওকে বাটনে ক্লিক করলেই ৮ নং ছবির মত উপর নীচে রাখা অনেক তথ্য পাবেন। সাইড স্ক্রলবার আপডাউন করে মাঝামাঝি আসলে রাউন্ড চিহ্ন দেওয়া জায়গায় সিরিয়াল নাম্বার পাবেন যেটি ক্যামেরার বডির সিরিয়াল। এভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে ক্যামেরাটি মত করা কিনা, বা রিফারবিশড কিনা। এই সাইটের অসুবিধা এখানে ক্যামেরার মডেল নাম্বার শো করে না। ফলে আমরা ক্যামেরার মডেল নাম্বার কনফার্ম হোয়ার জন্য আগের সাইটে ও সিরিয়াল নাম্বার কনফার্ম হওয়ার জন্য পরের এই সাইটে, অথবা আগের সাইটে যদি আমার ডি-৭৫০ মডেলের মত সব তথ্যই দেয় অধিকন্ত এই সাইটে ঢুকে ভেরিফাই করলে তো ক্ষতি নেই নিশ্চিত হওয়া ছাড়া।

চিত্র নং ৭


চিত্র নং ৮ এটা পেজের মাঝামাঝি স্থানে, সাইড বারে ড্র্যাগ করে আসা হয়েছে।

অতিরিক্ত কিছু বিষয়

একবার একটি সাইটে পরেছিলাম, নাইকন নাকি তাদের রিফারবিশড(Refurbished) ক্যামেরার ও লেন্সের সিরিয়াল নাম্বারের আগে ও পিছে খুব সুক্ষ দুটি ছিন্দ্র (pinch) করে দেয়। আমি অনেক জায়গায় নতুন ও পুরাতন ক্যামেরা দেখেছি কিন্তু কখনো এমন পাইনি। তবুও বলব বিষয়টি আপনারা কেনার সময় লক্ষ্য রাখবেন। নীচের ছবি দুটি লক্ষ্য করুন । 

চিত্রঃ ৯ একটি ক্যামেরাবডির সিরিয়াল নাম্বার এর পিছনে পিঞ্চ করা দুটি দাগ, নিচের টি লেন্সের।

চিত্র নং ১০

উপরের ছবি দুটির লিঙ্ক সাইট টি হলো  এটি।

বক্স প্যাকেট বা কার্টনের দিকে লক্ষ্য রাখবেন।

আমি সর্বশেষ যে ক্যামেরাটা বায়তুল মোকাররমে কিনতে গিয়েছিলাম, সেটার বক্স দেখেছিলাম মাঝখানে ভাঁজ করার কারনে ভাঙ্গা একটা দাগ ছিল, অর্থাৎ বোঝায় যায় বক্স আলাদা ভাজ করে আনা হয়েছে, আর বক্সের গায়ে সিরিয়াল স্টিকার ছিলনা সেটা তো আগেই বলেছি।

ঘ্রাণ

নতুন টাকার যেমন গন্ধ থাকে তেমনি নতুন ইলেকট্রনিক্স গিয়ারের আলাদা একটা গন্ধ থাকে, এটা বক্স খলার সাথে সাথেই আপনি বুঝে যাবেন, যত বেশী খোলা ও ব্যবহার করা হবে এই গন্ধটা তত কমে যায়। আমি ব্যাক্তিগতভাবে এটা লক্ষ্য রাখি। এমনকি নাকে নিয়ে গন্ধ শুকি।

 

ফার্স্ট ওপেন

নাইকন তার ক্যামেরা মহাদেশ, এমনকি দেশ ভিত্তিক কোডিং এবং সাপ্লাই দিয়ে থাকে। তাই ফার্স্ট ওপেন এর সময় যে এরিয়ার কোড স্টিকারে থাকে সেই ভাষাতে সেট করা থাকে, এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখবেন, বক্সের গায়ে বার কোডের সাথে ওই এলাকার সাংকেতিক চিহ্ন দেওয়া আছে কিনা। যেমন জাপান হলে (J) ,ইন্ডিয়া হলে (In) হংকং এলে (HK) আমেরিকার ক্ষত্রে (U) লিখা থাকে। যেমন আমার নাইকন ডি-৭৫০ এ টা ইউরোপিয়ান এরিয়ার তাই এর বারকোডের উপরে (EU) অক্ষরে এলফ্যাবেটিক মার্ক করা আছে। 

চিত্র নং ১১, বার কোডের উপরে BK=ব্ল্যাক , EU=ইউরোপ।

আবার কিছু ক্যামেরা ইউনিভার্সাল এরিয়ার জন্য করা হয়, সেই ক্যামেরাগুলো ফার্স্ট ওপেন এর সময় সবার প্রথমেই আপনাকে ভাষাগত অপশন দিবে, অর্থাৎ আপনি কোন ভাষা চুজ করবেন সেটার নির্দেশিকা থাকবে। তারপরে আসবে কোন এরিয়ায় আপনি থাকেন তা ঠিক করার জন্য একটা রেক্টাঙ্গেল ওয়ার্ল্ড ম্যাপ থেকে আপনি দেশের অবস্থান ঠিক করবেন তার পরে টাইম। এই সিস্টেমটাই হলো প্রাথমিক, এটা যদি না পেয়ে থাকেন এবং সেটা যদি অপারেশান মুডে থাকে তাহলে আপনি সেই ক্যামেরা আর নিবেন না। তবে অনেক ক্যামেরায় যদি অন্য ভাষা থাকে তাহলে সাথে সাথে বক্সের গায়ে বার কোডের দিকে তাকিয়ে দেখবেন সেখানে কোন দেশের কোড দেওয়া আছে। যেমন আমার নাইকন ডি-৩৩০০ তে বার কোডে (J)জাপান এলফ্যাবেটিক কোড দেওয়া ছিল অর্থাৎ এটা জাপানীজ মার্কেটের জন্যই নাইকন তৈরী করেছিল, তাই সেখানে জাপানের ভাষা পেয়েছি, আমি পরে সেটা কে ইংলিশ এ সেট করে নিয়েছি, আমি সাটার কাউন্ট ০১ থেকেই পেয়েছি এবং সিরিয়াল নাম্বার ও যথাযথ ছিল। কাজেই এটা নিয়ে আমি উদ্বীগ্ন নই। (ছবি-১২)

বক্সের ভেতরের কন্টেন্ট

বক্সের ভেতরে যা যা দেওয়া থাকে, বক্সের গায়ের লেবেলের সাথে তার একটা লিস্ট প্রিন্ট থাকে, আপনি সেই লিস্ট প্রিন্ট অনুযায়ী দেখবেন কি কি আছে। ভেতরে লেন্সের জন্য ও অন্যান্য এক্সেসরিজ যেমন ডাটা-কেবল,চার্জার ব্যাটারী ও অন্যান্য কিছুর জন্য, আলাদা আলাদা বক্সে থাকে। এই বক্সগুলো না থেকে যদি দেখেন সব একসাথে পলিথিনে মোড়ানো তবে বুঝবেন এটা ট্যাক্স ফাকি দেওয়া লাগেজের মাল, জেনুইন কি রিপিয়ারড সেটা পরের কথা। এটা ভালো করে পরীক্ষা করার জন্য পরের পয়েন্ট ভালো করে কাজে দিবে। 

চিত্র নং ১২ বারকোডর উপর (J )লিখা অর্থাৎ জাপান, এবং বক্সের গায়ে জাপানী ভাষায় লিখা।

ইউটিউবে আনবক্সিং (Unboxing)দেখবেন

যেটাকে আমরা বাংলায় বলি মোড়ক উন্মোচন। এটা বেশ মজার দেখতে ভালোও লাগে,নিজের থাক বা না থাক, আমি তো প্রায়শই এই কাজটা করি। কাজেই ইউটিউবে আপনি আনবক্সিং লিখে এবং নির্দিষ্ট মডেল নাম্বার লিখে সার্চ দিলে বহু আপলোড করা ভিডিও পেয়ে যাবেন। সেটা দেখে দেখে আপনি বুঝে যাবেন বক্সে কি থাকে, কিভাবে থাকে, ফলে আপনি দোকানে খোলার সময় সেটা মিলিয়ে দেখতে পারবেন,এমনকি আপনার নেট থাকলে কেনার সময় দোকানীকে ভিডিও চালিয়ে দেখিয়েও দিতে পারেন, যদি সে সেভাবে বক্স ও এক্সেসরিজ দিতে না পারে।
আপনাদেরকে ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ, এই ব্যাপারে আমার তথ্যগত কোন ভুল থাকলে দয়া করে রেফারেন্স দিয়ে জানাবেন, আমি শুধরিয়ে নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকবো। আপনাদের কষ্টের টাকায় দামী ক্যামেরা কিনে যেন প্রতারিত না হন সেই কারনেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। 

---------

লেখকঃ কামরুল আখন্দ
ইমেইলঃ kamrul_akhandh@yahoo.com

1 comment:

  1. How to find the best casinos with a royal casino - ShootersCasino
    Royal casino games allow players 제왕 카지노 to explore 바카라 사이트 their vast range of gaming options, and you can play right out of the box! This casino 샌즈카지노 may not be

    ReplyDelete