সুইস ব্যাংক সম্পর্কে আমাদের মাঝে প্রচলিত ধারনা হচ্ছে, সুইস ব্যাংক বুঝি একটা একক কোন ব্যাংক। আপনি এমনটাই জেনে থাকলে সরি টু সে, আপনার জানায় ভুল আছে
মূলত, সুইযারল্যান্ডের সব ব্যাংকগুলোকেই সুইস ব্যাংক বলা হয়। সম্প্রতিকালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী সুইযারল্যান্ডে ৩১২ টা ব্যাংক আছে যেগুলোর মোট ব্র্যাঞ্চ সংখ্যা ৩,৩৮২। এই সবগুলোই ‘সুইস ব্যাংক’।
-------------
সুইযারল্যান্ডের ব্যাংক হওয়া সত্ত্বেও কেন এত নাম-ডাক, আড়ালে এত ফিসফাস এই ব্যাংকগুলোকে নিয়ে? এমনকি হলিউডের মুভিতেও কেন দেখা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে বলি অন্য ব্যাংকগুলোর সাথে কী পার্থক্য এদের।
১. সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে, সাধারন ব্যাংকগুলোতে আপনার অ্যাকাউন্ট নাম্বার থাকবে, নাম থাকবে, টাকা তোলার সময় নাম, অ্যাকাউন্ট নাম্বার আর সিগনেচার – এই তিনটার ওপর ভিত্তি করে টাকা তুলতে পারবেন। আর সুইস ব্যাংকে হিসাব খুললে আপনাকে অ্যাকাউন্ট নাম্বারের বদলে কোড নাম্বার দেয়া হবে, কোন নাম বা হিসাব নাম্বার থাকবে না। আপনি যেই ট্রানযেকশানই করেন না কেন, সবই হবে একটা কোড নাম্বারের ওপর ভিত্তি করে।
তাতে কী ফায়দা? আপনাকে ট্র্যাক করা সহজ হবেনা, কেউ জানবেনা এই কোড নাম্বারের মালিক কে।
২. সুইস ব্যাংক যেই ল’ বলে নিয়ন্ত্রিত সেই ল’ অনুযায়ী ব্যাংকগুলো স্বায়ত্তশাসিত এবং তাদের কোন গ্রাহকের তথ্যই তারা কাউকে দিতে বাধ্য নয়, এমনকি সরকারের কাছে নয় কিংবা নয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর কাছেও। সুইস ব্যাংকগুলোকে তাই বলা হয় সবচেয়ে নিরাপদ এবং গোপনীয় ব্যাংক।
এই দুই বৈশিষ্টের কারনে এই ব্যাংকগুলো পৃথিবীর সেই মানুষগুলোর কাছে অনেক প্রিয় যারা অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করে এবং সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিতে চায়।
ফলশ্রুতিতে, পৃথিবীর মোট অবৈধ অর্থের সিংহভাগই এই ব্যাংকে জমা আছে। আমার কাছের এক পুরাতন রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০১ সালের দিকে পৃথিবীর মোট ফান্ডের ১/৩ ভাগ ফান্ড এই ব্যাংকে জমা ছিল। ব্ল্যাক মেইলিং, ড্রাগস সেলিং, আর্মস ডিলিং, অবৈধ গ্যাম্বলিং – কী জাতের ব্ল্যাক মানি নেই এতে?
-----------------
অপরাধীরা এভাবে সরকারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশ কোন উচ্চবাচ্য করে না এই নিয়ে?
হ্যাঁ করে।
সর্বপ্রথম আপত্তি আসে US এর তরফ থেকে। বিলিয়ন বিলিয়ন ট্যাক্স US সরকার বঞ্চিত হচ্ছে এই মর্মে এফবিআই কে পাঠায় তদন্ত করতে। তদন্তে বের হয় সত্যতা। এর পর বিশ্বের অনেক দেশের সরকার চাপ দেয়া শুরু করে সুইযারল্যান্ডকে।
-------------
তাহলে এখন এই ব্যাংকের নিরাপত্তা আর গোপনীয়তা কেমন পর্যায়ে আছে?
আগের মতই আছে। চারদিক থেকে প্রেশারের ফলে যা হয়েছে তা হল, তারা কোন গ্রহক সম্পর্কে কোন দেশের সরকারকে শুধু তখনই তথ্য দিবে যদি সেই গ্রাহক সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে এই মর্মে কোন প্রমাণ দাখিল করা হয় তাদের কাছে।
-------------------------
বাংলাদেশি কারও অ্যাকাউন্ট আছে এই ব্যাংকে?
না থাকাটাই কি অস্বাভাবিক নয়? হ্যাঁ আছে। আমাদের প্রিন্স মুসা বিন শমশের তো নিজের মুখেই বললেন সুইস ব্যাংকে থাকা তার ৫১ হাজার কোটি টাকার কথা! বর্তমানের কিছুটা শিথিল গোপনীয়তার কারনে এই ব্যাপারটা জানা গিয়েছে যে গত এক বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমান ৬২% বেড়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হয়ে আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংকও আপত্তি জানিয়েছে। সম্প্রতি সুইস ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক একটা মেমরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিঙে (MOU) যাচ্ছে। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক সুইস ব্যাংকগুলোতে থাকা বাংলাদেশীদের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। এর ফলেআশা করা যায় মানি লন্ডারিং অনেকাংশেই কমানো যাবে।
----------------
সুইস ব্যাংকের কারনে সুইযারল্যান্ডের কী লাভ হচ্ছে?
- ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরের লাভঃ ২০১১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী সুইযারল্যান্ডের ফিনান্সিয়াল সেক্টরে ৫৯.৮% ভাল্যু অ্যাড হয়েছে শুধু ওই এক বছরেই।
- ইকনোমিক সেক্টরের লাভঃ ওই বছরের জিডিপির ৬% শুধু সুইস ব্যাংকগুলোর কারনেই ছিল।
- শুধু বড় দুটো ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণই ২.৪৬৫ ট্রিলিয়ন US ডলার।
৩১২ টা ব্যাংক, ৩৩৮২ ব্র্যাঞ্চে কত মানুষ কাজের সুযোগ পেয়েছে সেটা নাহয় নাই টানলাম।
No comments:
Post a Comment