আমাকে জীবনে প্রথম চিঠি দিয়েছিল নিচ তলার ভাড়াটিয়ার মেয়েটা। আমরা বাড়িওয়ালা ছিলাম। আমি তখন দশ ক্লাসে পড়ি, আর ও বোধয় সিক্সে না সেভেনে।
কিন্তু চিঠিতে কী লেখা ছিল সেটা বলবনা। খারাপ কিছু যে ছিলনা ওতে সেটা বলাই বাহুল্য। আমার মত ভাল মানুষকে কে কী খারাপ কথা বলবে আবার!
না এমনি বললাম তার কথা। তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে অনেক বছর আগেই। আজ দেখলাম ফুটন্ত গোলাপের মত একটা ফুটফুটে সন্তান তার মা আমাদের ঘরে নিয়ে এসেছে। দেখেই মনটা জুড়িয়ে গেল।
তবে মনের মধ্যে চিনচিনে একটা ব্যাথাও অনুভব করলাম। ছোট্ট একটা মুখ থেকে কতদিন ধরে বাবা ডাক শোনার জন্য মনটা হাহাকার করছে, সেটা আল্লাহ্ আর আমি জানি।
প্রায় একবছর আগের কথা। এলিফ্যান্ট রোডের সাইন্সল্যাবে রেমন্ডের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম একদিন। সকাল বেলা ছিল তখন।
এক মহিলা এসে দাঁড়ালেন আমার পাশে। তাঁর কাঁধের মধ্যে মুখগুজে দুই বা তিন বছরের ছোট্ট একটা পরী ঘুমিয়ে রয়েছিল। আর সে কী সুন্দর ছিল মাশা-আল্লাহ!
আমাকে মহিলা জিজ্ঞেস করলেন, “ভাই, মোহাম্মাদপুরের বাসে উঠবো কোথা থেকে?”
আমি আমার বাম হাত প্রশস্ত করে ওভার ব্রিজটাকে দেখিয়ে বললাম, “ওই যে ওই ব্রিজটা আছেনা? ওটার নিচে গিয়ে দাঁড়ান। অনেকগুলো বাস থামবে মোহাম্মাদপুরে যাওয়ার জন্য।”
আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে হাঁটতে লাগলেন তিনি।
কিন্তু ওই পরীটার মায়া তো আমি ছাড়তে পারছিলাম না! ওকে আরেক নজর দেখার লোভে আমিও হাঁটা শুরু করলাম পেছনে পেছনে।
ও দিব্যি ঘুমিয়ে আছে মায়ের কাঁধে। কোন টেনশন নেই। আমার সুখ আর দেখে কে।
তিনি হাঁটছেন, আমিও হাঁটছি, সম্মানজনক এক তফাতে থেকে।
কী মনে হতেই তিনি একটু পর পেছনে ফিরলেন, আর তাকিয়েই সরাসরি আমাকে দেখতে পেলেন; ওই হেলদি ছেলেটাকে যার কাছে তিনি একটু আগেই সাহায্য চেয়েছিলেন।
এর ফলে যেটা হল, তিনি খুব দ্রুত হাঁটা শুরু করলেন। এমনভাবে হাঁটতে লাগলেন যেন পেছনে ফলো করা এই আমি হাইজাকার, যেভাবেই হোক খসাতে হবে আমাকে। মনে মনে কী ভাবছিলেন, কে জানে। একটু আগেই তিনি যার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, সেই মানুষটাই তাকে ফলো করছে এখন, এই ব্যাপারটা কারও কাছেই ভাল লাগার কথা নয়। ইনফ্যাক্ট আমার কাছেও লাগবেনা।
তিনিও ব্রিজের নিচে পৌছালেন, বাস থামল, আর উঠে পরলেন। আমি হারিয়ে ফেললাম পরীটাকে। এমন ভাবে মিস করছি ওকে সেদিনের পর থেকে, আজ একবছরেও ওকে ভুলতে পারিনি।
দিন যত যাচ্ছে আমি তত অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমার এই অসুস্থ অবস্থার কথা বুঝতে পেরে আম্মু রীতিমত আতঙ্কিত।
ভার্সিটির র্যাগডেতে আমার সাদা টি শার্টের পেছনে কে যেন লাল রঙ্গে বড় বড় করে লিখে দিয়েছিল,
“I want to be a father very soon!”
আর এটা নিয়েই সারাদিন বাইরে কাটিয়েছিলাম।
আমার মত বন্ধুহীন নিঃসঙ্গ মানুষগুলো এমনই; ছোট্ট ছোট্ট মানব শিশু আর বিড়াল-পাখির ছানার কিউটনেসে বুঁদ হয়ে পরে থাকে। এরাই শুধু আমাকে অনেক পছন্দ করে, কোন ইগো দেখায় না, কষ্টও দেয়না আমাকে। তাই এদের নিয়েই দিন কাটাই।
ভাল লাগার একটা ব্যাপার এই, আমার অসুস্থতা হারাম কোন রিলেশনশিপের জন্য না; আল্লাহ্র পবিত্র কিছু সৃষ্টির জন্য। এভাবে ভাবতে ভালই লাগে ব্যাপারটা।
No comments:
Post a Comment