ডিজিটাল
ক্যামেরার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু প্রায়ই হালকা ভাবে নেয়া হয় এমন একটা টপিক
হচ্ছে Metering
Mode। এই ব্যাপার নিয়ে কিছু লেখার প্রয়োজনীয়তা অনেকদিন ধরেই
অনুভব করছিলাম বলে আজ লেখাটা হাতে নিলাম। অল্প কথায় টপিকটা কাভার করার চেষ্টা করবো।
মিটারিং মোড
জানার আগে আমরা একবার জেনে নেই Incident Light এবং Reflected
Light নিয়ে।
ইনসিডেন্ট
লাইট হচ্ছে সেই আলো যা বস্তুর উপর পতিত হয়। এককথায়, চারপাশে বিদ্যমান আলোই মূলত
ইনসিডেন্ট লাইট।
এই ইনসিডেন্ট
লাইট বস্তুর উপর পতিত হয়ে তা প্রতিফলিত হয় এবং সেই প্রতিফলিত আলোই ক্যামেরার
সেন্সরে প্রবেশ করে। আর এই প্রতিফলিত আলোকেই বলা হয় রিফ্লেক্টেড লাইট। ক্যামেরা এই
রিফ্লেক্টেড আলো দেখেই ছবির এক্সপোযার বিচার করে। ইনসিডেন্ট লাইট ক্যামেরা বুঝতে পারেনা।
Exposure Triangle নামা। পর্বঃ ১ - শাটার স্পিড লেখাটা ভালো করে পড়ে থাকলে মনে থাকার কথা, এক্সপো্যার হচ্ছে একটা ছবি কতটা
আলোকিত বা অন্ধকারাচ্ছন্ন। যে পরিমান আলো থাকলে একটা ছবি দেখে ভালো লাগে সেই
ছবিটাকে বলা হয় properly exposed ছবি, ছবি অন্ধকারের দিকে চলে গেলে সেটাকে বলা হয় underexposed ছবি এবং ছবি তীব্র আলোকিত হয়ে গেলে সেটাকে বলা হয় overexposed ছবি। আপাতত এতখানি মাথায় রাখলেই চলবে।
শাটার স্পিড,
অ্যাপারচার এবং আইএসও –
এই তিনটি উপদান ছবির এক্সপো্যার নির্ধারণে সাহায্য করে তা আমরা জেনেছি। আর মিটারিং-এর
কাজ হচ্ছে একটা দৃশ্যের আলোর অবস্থা বর্তমানে কেমন সেটা পরিমাপ করা। আলো পরিমাপ
করে মিটারিং সিস্টেম ক্যামেরার ভিতরের Light Meter/Exposure
Meter নামক একটা স্কেলের মাধ্যমে সেই রেযাল্ট তুলে ধরে যেন তা
দেখে ফটোগ্রাফার শাটার স্পিড, অ্যাপারচার এবং আইএসও এর বিভিন্ন ভ্যালু কম-বেশি করে
নিয়ে তার ছবির কাঙ্ক্ষিত এক্সপোযার ঠিক করে নিতে পারে। এই স্কেলটা ভিউ ফাইন্ডারে
চোখ রাখলে দেখতে পাওয়া যায়, ব্যাক এলসিডি মনিটরেও থাকে আবার টপ এলসিডি মনিটরেও দেখতে
পাওয়া যায়। নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুনঃ
![]() |
লাইট মিটারের ছবি (লাল অংশ) |
মিটারিং মোড
মানে হচ্ছে, একটা দৃশ্যের ঠিক কোন অংশকে কেন্দ্র করে আলো পরিমাপ করতে হবে সেটা
নির্ণয় করার পদ্ধতিসসমূহ।
সহজ করার
চেষ্টা করি ব্যাপারটা।
ক্যামেরা
শুধু দৃশ্য চিনে। কিন্তু দৃশ্যের কোন অংশটুকও সাব্জেক্ট সেটা ক্যামেরা জানেনা। একটা
দৃশ্যের কিছু অংশে অনেক আলো থাকতে পারে এবং কিছু অংশে আলো অনেক কম থাকতে পারে। এমন
ক্ষেত্রে ক্যামেরা আলো পরিমাপ করতে গিয়ে অনেক বোকামি করে ফেলে। একটা উদাহরন খেয়াল
করুনঃ
ধরুন, কড়া
রোদে আপনার সাব্জেক্ট দাঁড়ানো এবং আপনার সাব্জেক্টের পেছনে সূর্য। এই ধরণের
ফটোগ্রাফিকে বলা হয় Backlit
Photography। এমন অবস্থায় আপনি ছবি তুললে আপনার ছবির মূল
সাব্জেক্টের চেহারা হবে underexposed। এর কারণ, ছবিতে কিছু অংশ অনেক
আলোকিত এবং কিছু অংশ অন্ধকারে। খোলা আকাশ থেকে বেশি আলো পাওয়ার কারণে ক্যামেরার
আলো পরিমাপের হিসাবে গরমিল হয়ে গেছে।
![]() |
Backlit Portrait |
এই অবস্থায় মিটারিং
মোড সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থাকলে আপনি নিজেই ক্যামেরাকে বলে দিতে পারবেন, তোমার
সাব্জেক্ট হচ্ছে ঐ যে দাঁড়ানো সেই মানুষটা। তার মুখের উপর থেকে প্রতিফলিত আলো দেখে
এবার আলো পরিমাপ কর, চারপাশে কী আছে বাদ দাও।
সাধারণত
নিচের তিনটা ক্ষেত্রে ক্যামেরা আলো পরিমাপ করতে গিয়ে বোকা হয়ে যায়ঃ
1. যখন দৃশ্যের বড়
একটা অংশ জুড়ে অন্ধাকার
2. যখন দৃশ্যের বড়
একটা অংশ জুড়ে অনেক আলো
3. যখন সাব্জেক্টের
পেছনে আলোর উৎস থাকে (Backlit Photography)
তাহলে আমরা
যেটা জানতে পারলাম সেটা হচ্ছে, মিটারিং অর্থ দৃশ্যের আলো পরিমাপ করা এবং মিটারিং
মোড হচ্ছে দৃশ্যের কোন অংশ থেকে আলো পরিমাপ করতে হবে তার পদ্ধতিসমূহ। এখন এই
পদ্ধতিসমূহ নিয়ে কথা বলবো।
নিকন,
ক্যানন, ফুজি, সনি, পেন্টাক্স –
সব কোম্পানির ক্যামেরায় কমপক্ষে ৩টি মিটারিং মোড থাকবেই থাকবে। কোন কোন কোম্পানির
ক্যামেরায় যেমন ক্যাননের ক্যামেরায় ৪টি মোড আছে। তবে কমন হচ্ছে ৩টি। এই ৩টি
মিটারিং মোডগুলো হলোঃ
1. Matrix Metering
2. Center-Weighted Metering
3. Spot Metering
স্পট মিটারিং
বাদে বাকি মোডগুলো বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন নামে অভিহিত করে। তবে কাজের ধরণ একই।
![]() |
বিভিন্ন কোম্পানির মিটারিং মোডের নাম |
কমন তিনটি মোড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছিঃ
Matrix Metering –
এই পদ্ধতিতে
ক্যামেরার লাইট মিটার সামনের দৃশ্যকে কয়েকটা যোনে বিভিক্ত করে নেয় এবং সেই প্রতিটি
বিভক্ত অংশের হাইলাইটস (বেশি আলোকিত অংশ) এবং শ্যাডো (বেশি অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশ) পরিমাপ করে নিয়ে
একটা গড় এক্সপো্যারের হিসেব দেয়। এই মিটারিং মোড হচ্ছে মিটারিং মোডের একটা অটো মোড
এবং বিভিন্ন ক্যামেরা কোম্পানির দাবিনুযায়ী প্রায় ৯০% ক্ষেত্রেই এই মিটারিং মোড
সঠিক রেযাল্ট দেয়।
![]() |
পুরো দৃশ্যের আলো পরিমাপ করে গড় এক্সপো্যার দিয়েছে ক্যামেরার মিটার। সাব্জেক্ট মোটামুটি আলোকিত। |
Center- Weighted
Metering –
এই পদ্ধতিতে ক্যামেরার
লাইট মিটার সামনের দৃশ্যের ঠিক মধ্যভাগে অবস্থিত অংশের আলো অনুযায়ী আলো পরিমাপ করে
এক্সপোযারের হিসেব দেয়। যে কোন সাব্জেক্টের জন্য যা আপনার ক্যামেরার ফ্রেইমের ঠিক মধ্যে আছে,
এমন ক্ষেত্রে এই মিটারিং মোড ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
![]() |
ফ্রেমের একদম মাঝের অংশের আলো পরিমাপ করেছে মিটারিং মোড। চারপাশের কিছুই ঠিকমত এক্সপো্যড হয়নি। |
ক্যামেরার
অ্যাক্টিভ অটোফোকাস পয়েন্ট দৃশ্যের যেই অংশে পড়বে ঠিক সেই অংশের আলো পরিমাপ করে এই
পদ্ধতিতে এক্সপোযার হিসেব করে দেয় লাইট মিটার। পোরট্রেইটের জন্য এই মিটারিং মোড বেশ জনপ্রিয়।
![]() | ||||||
সাব্জেক্টের উপর ফোকাস পয়েন্ট রেখে আলো পরিমাপ করা হয়েছে বলে সাব্জেক্ট ঠিকমত এক্সপো্যড হয়েছে। |
আজ এই পর্যন্তই। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে প্রশ্ন করতে পারেন।
ধন্যবাদ ব্রাদার
ReplyDelete